১.
বৃষ্টির জন্য প্রতীক্ষা আমার চিরকালের। বৃষ্টি এলে মনটা নেচে ওঠে আনন্দে। না চাইলেও প্রতিদিনই কত ময়লা জমে বুকে। কত অপমান, কত তিক্ততা সইতে হয়। ক্লান্ত হই। হাঁপিয়ে ওঠি। তখন অপেক্ষায় থাকি বৃষ্টির। বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় ভিতরের যত জঞ্জাল। তবে ইঁচড়ে পাকা বৃষ্টি একদমই ভালো লাগে না। বরং বিরক্ত লাগে। ধুম বৃষ্টি না হলে ভেতরটা যেন ঠিকমতো ভেজে না। মন যদি ছুঁয়ে না যায়, মর্মমূল যদি গভীরভাবে স্পর্শ না করে, তাহলে তেমন অসম্পন্ন বৃষ্টি আমার কাঙ্খিত নয়। যখন চারপাশ অন্ধকার হয়ে ক্ল্যাসিকাল সংগীতের মতো একটানা বৃষ্টি ঝরতে থাকে, তখন ঐশ্বরিক এক মৌতাতে বুঁদ হয়ে যায় সারা দেহমন। পবিত্র হয়ে ওঠে ভিতরভূমি। অনুভবের সেই বৃষ্টি সচারচর দেখা মেলে না। আর যখন দেখা মেলে, তখন হয়তো আমি প্রস্তুত নই। বৃষ্টি উপভোগ করতে হলে সময় একটা বড় ফ্যাক্টর। দুয়ে দুয়ে না মিললে সেটা উপভোগ্য হয়ে উঠে না। বৃষ্টিও তো সংগীতের মতো। তাকে অনুভব করতে হয় হৃদয় দিয়ে।
২.
কখনো কখনো বৃষ্টিতে ভিজতে খুব ইচ্ছে করে। আমার ইচ্ছে করলেই তো আর হবে না। যা কিছু ইচ্ছে করে, যা কিছু ভালো লাগে, যা কিছু ভালোবাসি, তার সঙ্গে আমার কেন যেন একটা আড়ি হয়ে যায়। অথচ এ ক্ষেত্রে আমার কোনো ভূমিকা থাকে না। বোধকরি সৃষ্টিকর্তা আমার শরীর ও মন এমনভাবে গড়েছেন, অনেক কিছুই ঠিকমতো অ্যাডজাস্ট হয় না। নাকি আমিই পারি না? নতুবা যা যা আমি মন দিয়ে চাই, গভীরভাবে চাই, তা কেন পাই না? পেলেও ধরে রাখতে পারি না। চুপি চুপি বলে রাখি, বৃষ্টি কিন্তু অনেক না বলা কথা বলিয়ে নেয়।
৩.
বৃষ্টি তো আর সব সময় সুরমাধুর্য হয়ে আসে না। অধিকাংশ সময়ই বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দেয়। বেশিরভাগ সময় স্কুল-কলেজ-অফিসে যাওয়ার সময় অথবা ফেরার সময় এমনভাবে বৃষ্টি নামে, তখন সেটাকে রীতিমতো মশকারা মনে হয়। বৃষ্টি একদমই মন বুঝতে চায় না। সময় বুঝতে চায় না। এটাই বড় আক্ষেপের। বৃষ্টি একদম না হলে একদিকে যেমন কষ্টের শেষ নেই, অন্যদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেও অন্তহীন ভোগান্তি। একই সময়, কারো কারো কাছে বৃষ্টি উপভোগের। আবার কারো কারো কাছে উপদ্রবেরও। তবুও বৃষ্টি কিন্তু কারো কাছেই অনাকাঙ্খিত নয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন