পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

আমাদের গন্তব্য কোথায়?

অনেক দিন ধরেই বিষয়টা বুকের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। কারো সঙ্গে শেয়ার করতে পারছিলাম না। অন্য কারো কি এমন মনে হয়, নাকি কেবল আমি একাই বিভ্রান্ত হচ্ছিলাম? সেটা বুঝতে পারছিলাম না। এমনও তো হতেই পারে, বয়সের কারণে আমার এমনটি মনে হচ্ছে। নিজের ফেলে আসা সময়কে সেরা মনে করার একটা প্রবণতা আমাদের আছে। আমারও কি তেমন মনে হচ্ছে? অবশ্য আমি যে সময়ের কথা বলছি, সেই সময়ের মধ্যে আমিও বলতে গেলে তেমনভাবে পড়িও না। বিষয়টি হলো, গত শতাব্দীর শেষ দিক থেকে আমরা এমন একটা সময় অতিক্রম করছি, যাকে বন্ধ্যা সময় বললে অতুক্তি হবে না। 

সৃজনশীলতার বাগানে বলতে গেলে নতুন ফুল ফুটছে না। এই সময়ে সত্যিকার ফুলের তুলনায় প্ল্যাষ্টিক ফুলেরই কদর বেশি মনে হচ্ছে। তাহলে আমরা কি একটা মন্দা সময় অতিক্রম করছি? এটি আমাকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। আমার কেন যেন মনে হয়, সব ক্ষেত্রেই কেমন একটা স্থবিরতা চলছে। গতানুগতিকার বৃত্ত থেকে যেন আমরা বের হতে পারছি না। সব কিছুই যেন একঘেয়ে, ক্লান্তিকর, বিরক্তিকর হয়ে উঠেছে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি..... কোথাও আশার আলো দেখছি না। 

কেন দেখছি না, সেটা কিছুটা হলেও বুঝতে পারলাম আজ প্রকাশিত একটি খবরে। তাতে মনে হলো, আমার ভাবনাটা বোধকরি একেবারে অবান্তর হয়। এর কিছুটা হলেও যৌক্তিকতা আছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, কয়েক দশক আগেও গড় বুদ্ধিমত্তার যে মাত্রা ছিল, এখন তা ধারাবাহিকভাবে কমে আসছে। প্রযুক্তির বুদ্ধিমত্তা যে হারে বাড়ছে, প্রযুক্তি নির্ভরতার কারণে সেই হারেই কমছে মানুষের বুদ্ধির মাত্রা। মানব মস্তিষ্ক বর্তমানে এর ধারণক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। যে কারণে বুদ্ধিমত্তার মাত্রা এর চেয়ে কখনই আর বাড়বে না। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কমতে পারে।

সম্ভবত এর লক্ষণগুলো প্রতিনিয়তই দেখতে পাচ্ছি। সব কিছুই কেমন যেন থমকে গেছে। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিতে দুনিয়াটাকে বদলে দেওয়ার মতো বড় মাপের কোনো ব্যক্তিত্ব উঠে আসছেন না। যাঁর দর্শন, যাঁর চিন্তা-ভাবনা, যাঁর নেতৃত্ব আমাদের উজ্জীবিত করবে, আলোকিত করবে, স্বপ্ন দেখাবে। আর কিছু না হোক, অন্ততপক্ষে নাড়িয়ে দেবে, তেমন কাউকেই তো দেখতে পাই না। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও একটা শূন্যতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই মাপের একজন লেখক, একজন চলচ্চিত্রকার, একজন শিল্পী কোথায়? যে বা যিনি কাঁপিয়ে দেবেন এই পৃথিবীকে। তেমন কারো দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। সবচে বড় কথা, মৌলিক কাজ খুব একটা হচ্ছে না। বরং অতীতের সৃষ্টিশীল কাজগুলোকে ভেঙেচুরে তচনচ করে দেওয়া হচ্ছে। নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ভালো লাগার অনুভূতিকে। 

যদিও এমন ঢালাও মন্তব্য করা সমীচিন হচ্ছে কিনা বুঝতে পারছি না। কিন্তু দূরের দুনিয়ার কথা বাদ দিলেও আমি যে ছোট্ট জগতে বসবাস করি, তাকে তো কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারি। সেই জগতটা কেমন যেন ম্লান ও ম্রিয়মাণ মনে হয়। কোনো কিছুই আকৃষ্ট করতে পারছে না। ভাবনা উসকে দেওয়া বই, দর্শনীয় সিনেমা, হৃদয়ছোঁয়া গান কি আমরা খুব বেশি শুনতে পাই? বোধকরি পাচ্ছি না। যে কারণে ভার্চুয়াল দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ার ঝোঁক ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তার মাত্রা কমে যাচ্ছে। বাড়ছে প্রযুক্তি নির্ভরতা। তাই নয় কি? তাহলে আমাদের গন্তব্য কোথায়?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন