কোনো তাত্ত্বিক বিশ্লেষণে না গিয়েও বলা যায়, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা দুটি শ্রেণীতে বিভক্ত। একদিকে নিম্নবিত্ত, অন্যদিকে বিত্তশালীরা। অবশ্য কোনো সমাজ ব্যবস্থাই একক কোনো কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে নেই। একটা ব্যবধান সব সময়ই বিরাজমান। কিন্তু বাংলাদেশের মতো অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যে তীব্র ফারাক গড়ে উঠছে, তা অবশ্যই আশঙ্কাজনক। যারা গরিব, তারা আরো গরিব হচ্ছে, আর ধনীরা অর্থ-বিত্তে আরো ফুলে-ফেঁপে উঠছে। শ্রেণীহীন সমাজব্যবস্থা অনেকটা কাঁঠালের আমসত্ত্ব হলেও ভারসাম্যহীনতা ও ব্যবধান ক্রমশ বাড়তে থাকলে সে সমাজ কাঠামো কখনো শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে পারে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোয় যে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, তার অন্যতম কারণ এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। শুরু থেকেই এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি গলদ রয়ে গেছে। সময় সময় শিক্ষা কাঠামো বদলেছে। বদলটা হয়েছে উপরি কাঠামোয়। সত্যিকার অর্থে কোনো বদল হয়নি। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থাটা প্রধানত সচ্ছল শ্রেণীর আওতাভুক্ত। ব্রিটিশরা এ দেশে যে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে, তার সুফল পেয়েছে এ দেশে বসবাসরত ব্রিটিশ পরিবারের সন্তান, নবাব পরিবার এবং ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্পৃৃক্ত এক শ্রেণীর পরগাছা। দেশভাগের পর পাকিস্তান আমলে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের বিবেচনা করা হয় দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে। এ অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে উপেক্ষা করার মাধ্যমে দারুণভাবে অবহেলা দেখানো হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও শিক্ষা-দীক্ষায় খুব বেশি এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তৈরি হয়েছে মাছিমারা কেরানি গোষ্ঠী। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তনের তেমন হাওয়া লাগেনি। বরং ব্রিটিশ, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ককটেল তৈরি হয়ে একটা আজব কিসিমের শিক্ষা ব্যবস্থা দাঁড়িয়েছে। যুগোপযোগী কোনো শিক্ষানীতি না থাকায় বিশ্ব ব্যবস্থার সঙ্গে আমরা ক্রমান¦য়ে পিছিয়ে পড়ছি এবং শিক্ষাক্ষেত্রে একটা বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। আর এ বৈষম্যের অন্যতম কারণ বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত তিন ভাগে বিভক্ত : ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম ও মাদ্রাসা শিক্ষা। ইংরেজি মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরা পড়ালেখা করে বাংলা মিডিয়ামে। তবে এক্ষেত্রে শহর ও গ্রামের মধ্যেও পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নবিত্তদের প্রধান অবলম্বন মাদ্রাসা শিক্ষা। শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, ধর্মীয়সহ বিভিন্ন ধরনের যে ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা শ্রেণীগত ব্যবধান ও বৈষম্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে মেয়েরাও অনেক পিছিয়ে আছে। পুরনো ঐতিহ্য ও পশ্চাৎপদ মন-মানসিকতার কারণে ছেলে ও মেয়ের মধ্যে ব্যবধান গড়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে শিক্ষার খাত খুব বেশি উন্নত নয়। বাংলাদেশের শিক্ষার আনুমানিক হার ৩৫ শতাংশ। এর মধ্যে পুরুষ ৫২ শতাংশ এবং মহিলা ২৯ শতাংশ। অন্যান্য নিম্ন আয়ের দেশের তুলনায় এ হার খুবই কম। অন্যত্র এই হার ৬০ শতাংশের কাছাকাছি। বাংলাদেশে জিএনপির ২ দশমিক ২ শতাংশ ব্যয় হয় শিক্ষা খাতে। গড়পড়তা আয়ের দেশগুলো এ খাতে ব্যয় করে ৩ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ আয়ের দেশগুলো শিক্ষা খাতে ৬ শতাংশ ব্যয় করে। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকার ৪০ শতাংশ শিশু কখনোই স্কুলে যায় না। যারা যায়, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ প্রাথমিক স্কুলের গ-ি অতিক্রম করে। মাত্র ৭ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেহাল অবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের বসার মতো পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল নেই। শিক্ষা উপকরণের দারুণ সংকট। ঝড়-বৃষ্টিতে অনেক স্কুলে ক্লাস করা সম্ভব হয় না। বর্ষাকালে তো অনেক স্কুল ডুবে যায়। খেলার মাঠ অল্প কিছু স্কুলে নামকাওয়াস্তে থাকলেও পাঠাগারের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। দেশের প্রায় ৫৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরের স্কুলগুলোকে বাদ দিলে অধিকাংশের অবস্থাই শোচনীয়। সর্বজনীন ও মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা এখন অবধি নিশ্চিত করা যায়নি। শিক্ষার প্রাথমিক ভিতটা গড়ে ওঠে নিচের পর্যায়ে। প্রাথমিক অবস্থা যেখানে মোটেও আশানুরূপ নয়, সেখানে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অবস্থা খুব বেশি আশাব্যঞ্জক হওয়ার কথা নয়। প্রায় ১২ হাজার মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হালও সুবিধাজনক নয়। স্মাতক পর্যায়ের কলেজগুলোতে শিক্ষার্থীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। চলতি শিক্ষা বছরে শিক্ষার্থীর অভাবে স্মাতক ও স্মাতকোত্তর পর্যায়ের কলেজগুলোতে প্রায় সোয়া লাখ আসন শূন্য থাকবে। একজন ছাত্র নিয়েও কোনো কোনো কলেজ চলছে। গ্রামাঞ্চলে এ চিত্র বেশি দেখা যায়। শিক্ষা পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যুরো (ব্যানবেইস)-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশে এখন ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, ৪২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ১৫০টি স্মাতক (সম্মান) পর্যায়ের কলেজ রয়েছে। এছাড়া রয়েছে ১১৬০টি কলেজ, ১৩টি সরকারি মেডিকেল কলেজ, ৪টি বিআইটি কলেজে। সব মিলিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসনের সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার। গতবছর ভর্তির যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৮ জন। ৫ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যায়। চলতি শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা শূন্য থাকবে ১ লাখ ১৪ হাজার ২৮২টি। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, ছাত্র-ছাত্রী না থাকলেও স্থানীয় প্রভাব-প্রতিপত্তি ও রাজনৈতিক কারণে নামমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। এতে অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থের। সরকারি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষার মান দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। জবাবদিহিতার অভাব, বিনিয়োগে ভারসাম্যহীনতা, মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব এবং শিক্ষা খাতে অপর্যাপ্ত বরাদ্দ এর অন্যতম কারণ। যদিও বাৎসরিক জাতীয় বাজেটে শিক্ষাক্ষেত্রে বরাদ্দ বেশি দেখানো হয়। এই বাজেট নানাভাগে ভাগ হয়ে যায়। প্রকৃত অর্থে শিক্ষার জন্য তেমন ব্যয় হয় না। কাটছাঁট করার পর যেটুকু বাজেট বরাদ্দ থাকে, তার সিংহভাগই ব্যয় হয় দালান নির্মাণ, শিক্ষকদের বেতন আর বিশেষ বিশেষ শ্রেণীর সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তীব্র আবাসিক সংকট বিদ্যমান। পর্যাপ্ত চেয়ার-টেবিল নেই। বিছানা পেতে ঘুমানোর জায়গা নেই। ৪ জনের জায়গায় ১৪ জনকে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয়। এমনকি কমনরুম ও ডাইনিং রুমে ছাত্র-ছাত্রীরা গাদাগাদি করে থাকে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটা সহজ ব্যাপার নয়। ভর্তি হতে ইচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে শতকরা ১৫ জন ভর্তি হতে পারে। তাছাড়া রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের প্রভাবে দলীয়মনা ছাত্রদের ভর্তি করতে হয়। ফলে মেধাবী ছাত্রদের ভর্তির সংখ্যা আরো হ্রাস পায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মূলত শহরের অপেক্ষাকৃত সচ্ছল পরিবারের সন্তানরা সুযোগ পায়। দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তেমন সুযোগ-সুবিধা পায় না। প্রতি বছর টিউশন ও ফি দেয়ার মতো সামর্থ্য অনেক মেধাবী ছাত্রের নেই। অধিকাংশ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে মোটেও আগ্রহী নন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ ১৯৭৩ লঙ্ঘন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও, বেসরকারি কলেজ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, কোচিং সেন্টারসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে সমান্তরালভাবে কাজ করছেন। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২০০ শিক্ষকের মধ্যে ৪২৫ জন বিনানুমতিতে বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও একই রকম। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘স্বায়ত্তশাসনের নামে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন অমান্য করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক সংকট লেগেই আছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান দিন দিন কমছে। ছাত্র-ছাত্রীরা লেখাপড়া করে না। তাদের মধ্যে ‘ফটোকপি কালচার’ গড়ে উঠেছে। শিক্ষকদের মধ্যে উদাসীনতা ও ভোগবাদিতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’ সর্বস্তরে শিক্ষার সমান অধিকারের কথা বলা হলেও শিক্ষাক্ষেত্রে সংকট ও বৈষম্য বেড়েই চলেছে। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি দেয়ার পর শিক্ষা খাতে বৈষম্য নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয়বহুল ও মূলত এলিটদের জন্য। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ও ফি কমপক্ষে ৩৫০০ ডলার। যা খুব কম ছাত্রের পক্ষে বহন করা সম্ভব। অবশ্য প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষাবলম্বনকারীদের অভিমত হচ্ছে : প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা আগামীতে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তাছাড়া ১৯৯২ সালে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী ৫ শতাংশ দরিদ্র ছাত্র বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়ারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে না যাওয়ায় সাধারণত: অপেক্ষাকৃত গরিব ছাত্ররা পড়ালেখার সুযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু ভিন্ন মতাবলম্বীরা বলেন, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে অন্যদের একটা ব্যবধান গড়ে উঠেছে। এ দেশের মাটির সঙ্গে তাদের তেমন সম্পর্ক নেই। দেশ ও দেশের মানুষ তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। যে কারণে দেশের উন্নতি ও অগ্রগতি নিয়ে তারা ভাবেনও না। তাছাড়া প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা কারোই যাচাই করার সুযোগ নেই। তাদের কার্যক্রমও স্পষ্ট নয়। এ কারণে রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বলেছেন : ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা রাখা প্রয়োজন। সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা ব্যয় অনেক বেশি।
স্বল্পসংখ্যক ধনী পরিবারের সন্তানই এগুলোতে পড়ালেখার সুযোগ পায়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দেখে কেউ যেন না ভাবে- এগুলো প্রতিষ্ঠা হয়েছে কেবল কিছুসংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীর কথা মাথায় রেখে, যাদের অভিভাবকরা অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল।’ সমাজ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শিক্ষা ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চাটা অপরিহার্য। শিক্ষার আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত মানুষেরা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তাই উপলব্ধি করতে পারে না। উন্নয়নশীল দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষা ন্যায়বান সমাজ গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া নিুবিত্ত ছাত্রদের পক্ষে উচ্চ শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। নিুবিত্ত ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া মেধাবী ছাত্রদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমান সুযোগ-সুবিধা দেয়া হলে সমাজে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা নিয়ে আসতে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জনগণ যে ভর্তুকি দেয়, তাতে সমাজের বিদ্যমান অসাম্য দূর হচ্ছে না। এ জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, বাস্তবধর্মী ফি কাঠামো, উচ্চ শিক্ষার জন্য গরিব ছাত্রদের ঋণ দেয়া, সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত তরুণদের বিশেষ ভর্তি কর্মসূচি, সমাজের বাস্তব চাহিদা ও শিক্ষার কারিকুলামের মধ্যে ব্যবধান, পরীক্ষা পাসের হার বাড়ানো এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বিরাজমান বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। যদিও শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, ‘১৫/২০ টাকা দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো সম্ভব নয়।’ তবে এটা তো ঠিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিপণন কেন্দ্র নয়। শিক্ষা কেনা-বেচার পণ্যও নয়- এটা জ্ঞান সৃষ্টির কেন্দ্র। তাছাড়া শিক্ষা সুযোগ নয়, অধিকার। শিক্ষা খাতে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া না হলে শিক্ষা চলে যাবে উচ্চবিত্তদের হাতে। সমাজে বৈষম্য বাড়বে। বাড়বে অস্থিরতা। এমনিতেই শহর ও গ্রামের শিক্ষার মান এক নয় এবং সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবধান গড়ে ওঠায় বৈষম্য বাড়ছে বিত্তবান ও বিত্তহীনদের মধ্যে। বিদ্যমান বৈষম্য দূর করাই যেখানে কঠিন, সেখানে নতুন করে যাতে বৈষম্য সৃষ্টি না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আর এ ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোই উত্তম পন্থা।
দৈনিক সংবাদ : ১৫ জুন ২০০৩
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন