পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

সোমবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৩

আমাদের বদলে যাওয়া


পেছন ফিরে তাকালে অনুধাবন করা যায় বদলে যাচ্ছে আমাদের সমাজ, আমাদের সংসার। রূপান্তর ঘটছে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের। বদলটা মূলত হয়েছে মানচিত্র ও সময়কে কেন্দ্র করে। একাধিকবার বদলেছে এ অঞ্চলের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। সেই ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের সংস্পর্শে এসে বদলেছে কিছু মানুষ। কেউ কেউ ব্রিটিশদের ফাই-ফরমাশ খেটে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন; আবার কেউ কেউ ব্রিটিশদের চুইয়ে পড়া শিক্ষার আলোকে পুঁজি করে বদলে নিয়েছেন নিজেদের ভাগ্য। প্রধানত গ্রামীণ জনপদ হিসেবে আবহমানকাল থেকে চলে আসা এ অঞ্চলের কিছু মানুষের মধ্যে এই পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে ঘটে যায় সামাজিক বিভাজন। অবশ্য এর আগেও সামাজিক বিভাজন ছিল। তা ছিল সীমিত পরিসরে। একদিকে ছিলেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ; অন্যদিকে নবাব বা জমিদার গোছের ব্যক্তিরা। নবাব বা জমিদারের সংখ্যা ক’জনই বা ছিল? তবে দু’শ বছরের ব্রিটিশ শাসনে উদ্ভব ঘটে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। পরবর্তীকালে এরাই হয়ে উঠেন এ অঞ্চলের ভাগ্য বিধাতা। ১৯৪৭ সালের দেশভাগে সবচেয়ে বড় সুবিধাবাদী হয়ে ওঠে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণী। যদিও পাকিস্তানিরা বিভীষণ হয়ে দেখা দেয়, কিন্তু ব্রিটিশের অনুগ্রহভোগীরা ঠিকই তাদের অবস্থান আগের মতোই পাকাপোক্ত করে নেয়। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নির্যাতনে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও ধর্মের নামে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী শ্রেণী তাদের ‘তৃণভোজী’ হয়ে ওঠে। এছাড়া ক্ষোভ-বিক্ষোভ-আন্দোলনের চাপে পাকিস্তানি শাসকরা কিছুটা ছাড় দিলে অল্প কিছু মানুষ এগিয়ে আসে শিক্ষা-দীক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে। শিক্ষকতা, ওকালতি, চিকিৎসা, কেরানিগিরিসহ বিভিন্ন পেশায় অনেকেই এগিয়ে আসে। ফলে সমাজে একটা পালাবদল অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে। সুদূর আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ জীবনধারণ করে এসেছে কৃষিকাজ করে। হাজার বছর ধরে একই রকমভাবে চলে আসা জীবনযাত্রা আস্তে-ধীরে বদলে যেতে থাকে। ক্রমাগত শোষণ, নির্যাতন ও বঞ্চনায় আন্দোলন, সংগ্রাম ও স্বাধিকার চেতনাবোধ তীব্র ও তীক্ষন হয়ে ওঠায় পরিবর্তনের হাওয়াটা জোরালো হয়ে ওঠে। ঢাকা শহরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠতে থাকে নতুন একটি শ্রেণী। যদিও খুব বেশি জৌলুস ছিল না, তারপরও পরিবর্তনটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। যারা শিক্ষার পাঠ নিয়েছেন, তারা নিজেদের অবস্থান পরিবর্তনের আশায় ছুটতে থাকেন ঢাকায়। ঢাকা শহরও তাদের আপন করে নেয়। শুরুতে গ্রামের বন্ধন কাটিয়ে এক/দু’জন করে শহরমুখো হতে থাকেন। বন্ধন কাটলেও নাড়ি কিন্তু পোঁতা থাকে গ্রামে। গ্রামের সঙ্গে বন্ধনটা কখনোই ছিন্ন হয়নি। ঢাকা শহরে জীবিকা জুটিয়ে নিলেও পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব থাকে গ্রামে। চাকরির ছুটি-ছাটায় গ্রামে ফিরে যাওয়াটা হয়ে ওঠে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।


হাজার বছর ধরে চলে আসা যে গ্রামীণ জনপদ, তার যে জীবনধারা, তার সঙ্গে যে নিবিড় সম্পর্ক, তা সহজেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয় না। টিনের, ছনের বা মাটির ঘরে বসবাস, ঢেঁকিতে চাল ভাঙ্গানো, মরিচ দিয়ে পান্তা ভাত খাওয়া, মাটির হাঁড়িতে ভাত রাঁধা, নিজের হাতে গরু-ছাগলের দুধ দোয়ানো, নদী-পুকুর-খালে মাছ ধরা, যখন-তখন মুড়ি-মুড়কি-গুড়-পিঠা খাওয়া, আঁতুর ঘরে দাইয়ের হাতে সন্তান জন্ম, পিঁড়িতে বা মাদুরে বসে ভাত খাওয়া, তাল পাতার পাখায় বাতাস খাওয়া, হেঁটে বা নৌকায় কিংবা লঞ্চে যাতায়াত, পালকিতে চড়ে বিয়ে করা, রুমাল-চাদর-বালিশে সুতো দিয়ে মেয়েলি হাতের সূক্ষ্ম কারুকাজ, ফুল-পাখি আঁকা কিংবা গভীর ভালোবাসা নিয়ে লেখা ‘যাও পাখি বল তারে, সে যেন ভোলে না মোরে’, সরিষার তেল সারা শরীরে মেখে পুকুরে বা নদীতে গোসল করা, অবসরে পুঁথি পাঠ বা পল্লীগীতি শোনা, ছেলেরা লুঙ্গি, গেঞ্জি, ধুতি, পাজামা-পাঞ্জাবি; মেয়েরা শাড়ি পরিধান করা, শীতকালে নানা পিঠা-পুলি খাওয়ার ধুম লাগা, বিশেষ করে চুলার পাশে বসে ভাপা পিঠা খাওয়া, অসুখে-বিসুখে বিভিন্ন ঔষধি গাছ বা ফল ব্যবহার করা ইত্যাদি ছিল গ্রামীণ জীবনের চিরকালের অনুষঙ্গ। এই গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে নাগরিক মধ্যবিত্তের বেশ সময় লেগেছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর আমূল বদলে যেতে থাকে বাংলাদেশ। সৃষ্টি হতে থাকে শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত। হঠাৎ করে পাওয়া স্বাধীনতায় চাকরি, ব্যবসাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়, তা পূরণ করার জন্য গ্রাম থেকে পঙ্গপালের মতো ছুটে আসতে থাকে শিক্ষিত, আধা-শিক্ষিত ব্যক্তিরা। গ্রামের বন্ধন ছিন্ন করে শহরে গড়ে উঠতে থাকে মধ্যবিত্ত। এই মধ্যবিত্তকে কেন্দ্র করে নতুন একটা ধারা গড়ে উঠতে থাকে।


একদিকে গ্রামের ফেলে আসা জীবনের প্রতি মোহ, অপরদিকে নাগরিক জীবনের আকর্ষণ- এই দোটানার মাঝে এগিয়ে যেতে থাকে উঠতি মধ্যবিত্ত। ইট-পাথর-সিমেন্টের বাসা, বিদ্যুৎ-পানি-গ্যাসের ব্যবহার, বাসে-ট্রেনে চলাচল, ছেলেরা শার্ট-প্যান্ট, মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ, ঢাউস খোঁপা, চোখে কাজল, সস্তা প্রসাধনী ব্যবহার, রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমে বিনোদনের খোরাক মেটানো, সিনেমা দেখতে যাওয়া, রোমান্টিক বাংলা গানে বিভোর হওয়া, চিড়িয়াখানায় যাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, সঙ্গে নাবিস্কো বিস্কুট কিংবা গোলপাতায় করে মিষ্টি নিয়ে যাওয়া, মেহমান এলে সাধ্যমত আপ্যায়ন করা, গানে-কবিতায় মেতে থাকা, ছবি আঁকা, পাড়ায় পাড়ায় নাটক করা, বিকেল বেলায় ছেলেমেয়েদের খেলাধুলায় মেতে থাকা, মার্বেল, সিগারেট প্যাকেট, ডাংগুলি খেলার পাশাপাশি ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন ছিল বাধ্যতামূলক। সন্তান প্রসবে নার্স-ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। আস্তে-ধীরে বদলে যেতে থাকে জীবনযাপনের স্টাইল। সবকিছু মিলিয়ে গ্রামের সহজ-সরল জীবনের ছাপ তবুও থেকে যায় নাগরিক জীবনে। তবে আশির দশক থেকে গ্রামের সঙ্গে গড়ে ওঠা শহরকেন্দ্রিক মধ্যবিত্তের সম্পর্কের বন্ধন ক্রমশ শিথিল হতে থাকে। রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় বদলে যেতে থাকে গ্রামীণ জীবন। মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমের বাজার খুলে যাওয়ায় সরাসরি গ্রাম থেকে ছুটতে থাকে অনেক মানুষ। তাদের পাঠানো টাকা-পয়সায় কিছু কিছু গ্রামের ছুরত পাল্টে যেতে থাকে। পক্ষান্তরে ঢাকা শহরের ব্যাপক রূপান্তর ঘটে। হঠাৎ করে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে যায়। সাধারণ চাকরিজীবীর যে বৃত্ত, তা ভেঙ্গে নতুন নতুন কর্মজীবীর আবির্ভাব ঘটতে থাকে। মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ সরকারি আমলা, কোটিপতি, ব্যবসায়ী, টাউট-বাটপারের সংখ্যা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। যে কখনো যা ভাবেনি, স্বাধীনতার সুবাদে তাই পেয়ে যাওয়ায় সমাজে দ্রুত একটা পরিবর্তন ঘটে যায়। সে সঙ্গে বহুজাতিক কোম্পানির নানারকম প্রলোভন বদলে দিতে থাকে প্রতিদিনের জীবনযাত্রা। এমনকি, বদলে যেতে থাকে নাম পর্যন্ত। রহিমুদ্দিন-করিমুদ্দিনের পরিবর্তে আধুনিক নামের বাহার লক্ষ্য করা যায়। শিক্ষা-দীক্ষা, পোশাক-আশাক, খাদ্যাভ্যাস, মূল্যবোধের পাশাপাশি ঘটে যায় সামাজিক বিবর্তন। একই সঙ্গে লক্ষ্য করা যায় অবক্ষয় ও অধঃপতনের ধারা। রক্ষণশীলতার ব্যুহে আঘাত হানলেও মন-মানসিকতার দিক দিয়ে মধ্যবিত্তের পক্ষে খুব বেশি অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি। যে কারণে পোশাক-আশাকে রূপান্তর ঘটলেও পশ্চাৎপদ মানসিকতার বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে আসা যায়নি। রাজনৈতিক অঙ্গনে দুর্বৃত্তায়ন সমাজ কাঠামোকে ভেঙ্গে দিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে নীতি-নৈতিকতা, ত্যাগ-তিতিক্ষা ছিল, তা ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি করাটা জটিল হয়ে পড়ে। অসৎ, মাস্তান, টাউট, ধান্দাবাজরা রাজনৈতিক অঙ্গনে জেঁকে বসেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাই এখন নিয়ন্ত্রণ করছে রাজনীতি। রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি হঠকারী, নিচু মন-মানসিকতাসম্পন্ন, মেধাহীনদের দখলে চলে যায়, তার চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে! যে কারণে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবক্ষয়, নৈরাজ্য ও অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছে। মানুষ এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার মনোবৃত্তি তার নেই। সবাই এখন আত্মকেন্দ্রিক, স্বার্থপর হয়ে উঠেছে। কত সহজে অর্থ উপার্জন করা যায় এবং কীভাবে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠা যায়, সে চিন্তায় মশগুল। স্বার্থসিদ্ধির জন্য হেন কোনো পথ নেই, যা অবলম্বন করা হচ্ছে না। বোধ, বুদ্ধি, বিবেক ও বিবেচনা সর্বাংশে লোপ পেতে চলেছে। বিদেশি অনুদানের পাশাপাশি সরকারি সম্পত্তি লোপাট, ঘুষ, চোরাচালানিসহ যাবতীয় দুই নম্বরী পথ বেছে নিয়ে হঠাৎ করে কিছু লোক রমরমা হয়ে উঠেছে। হরদম বিদেশ যাচ্ছে। দামি হোটেলে খাচ্ছে। দেদারসে টাকা ওড়াচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটি অংশ বিত্তবান হয়ে ওঠায় সমাজে নতুন একটি শ্রেণীর জন্ম নিয়েছে। এই শ্রেণীর আয় এবং ব্যয়ের কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। নানারকম রহস্যজনক কাজ-কারবারের পাশাপাশি নতুন একটা উপসর্গ দেখা দিয়েছে ব্যাংকের টাকা মেরে দেয়া। ঋণখেলাপি হিসেবে পরিচিত হলেও সমাজের চাবিকাঠি তাদের কাছে।


এ কারণে নব্বই দশকে পরিবর্তনের একটি জোয়ার আসে। রঙিন টেলিভিশন, ভিসিআর, ডিশ অ্যান্টেনা, এসি, জেনারেটর, ইউপিএস, কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, বাথটাব, দামি দামি অ্যাপার্টমেন্ট, মোবাইল, লেটেস্ট মডেলের পাজেরো, বিদেশি ফ্যাশনেবল ড্রেস, মেক-আপ, সিডি, ব্যান্ড সঙ্গীত, ফ্যাশন শো, বিউটি পার্লার, ম্যাসেজ পার্লার, সুপার মার্কেট, ওয়ান স্টপ মল, কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ে, জন্মদিন পার্টি, স্যান্ডউইচ, বার্গার, স্যুপ, চাইনিজ, কোকাকোলা, আইসক্রিম খাওয়া, ঘন ঘন বিদেশ সফরসহ ইউরোপ-আমেরিকার সর্বশেষ ফ্যাশন ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার সঙ্গতি অনেকেই অর্জন করেছেন। যে কোনো কিছুই এখন সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। হেরোইন, নেশার দামি ট্যাবলেট, আল্টা মডার্ন নারী চোখের পলকেই হাতের মুঠোয় এসে যায়। একবিংশ শতাব্দী বিশ্বায়ন ও হাই-টেকের যুগ। সবকিছু এখন অবাধ হতে চলেছে। ২০০৫ সালের জানুয়ারি থেকে সারা দুনিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের সব বিধি-বিধান পরিচালিত করবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এ সংস্থার একক ও আধিপত্যবাদী বিধি-বিধানের ফলে দুনিয়াব্যাপী বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলোর শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। উন্নত বিশ্ব আর উন্নয়নশীল বিশ্ব এবং ধনী আর দরিদ্রের মাঝে সৃষ্টি হবে তীব্র বৈষম্য। একই সময় প্রবর্তিত পেটেন্ট রাইটসের নামে নিঃস্ব হয়ে যাবে এ দেশের কৃষক-শ্রমিক। এমনিতেই সমাজে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের সৃষ্টি হলেও কৃষক ও শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। খেয়ে-না খেয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছে জীবন-সংগ্রাম। পেটেন্ট রাইটসের কারণে আমাদের দেশের হাজার বছরের কৃষক সম্প্রদায় দ্বারা আবিষ্কৃত ও লালিত বীজ, গাছ ও প্রাণ সম্পদকে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে তুলে দেয়া হবে। বিপন্ন হয়ে পড়বে তাদের জীবন ও জীবিকা। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার খপ্পরে পাল্টে যাবে পৃথিবীর আর্থ-সামাজিক অবস্থান। পাল্টে যাবে আমাদের মূল্যবোধ ও জীবনযাপনের পদ্ধতি। আমাদের প্রথা, প্রতিষ্ঠান ও অর্থনীতি নতুনভাবে বিন্যস্ত হওয়ায় আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ধাক্কা লাগবে। আমাদের সমাজের গরিষ্ঠ অংশ এ পরিবর্তন সম্পর্কে কিছুই জানে না। একটা অপ্রস্তুত অবস্থায় তাদের এই পালাবদলের মুখোমুখি হতে হবে। এমনিতেই আমাদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক অবস্থা ভঙ্গুর, তার ওপর বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ায় আমাদের অবস্থা কী দাঁড়ায়, তা সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। 

দৈনিক ভোরের কাগজ : ২৩ জুন ২০০৩

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন