পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ফারিয়া লারা : উড়ন্ত এক প্রজাপতি

তখন দৈনিক পত্রিকায় কর্মরত। অধিকাংশ সময় থাকতো লেট-নাইট ডিউটি। বাসায় ফিরতে ফিরতে সকাল হয়ে যেত। যে কারণে সারা দুপুর ঘুমিয়ে কাটাতাম। সেদিন সবে ঘুমিয়েছি, এমন সময় আমার অন্ধকার ঘরে আচমকা জ্বলে ওঠে আলো। তড়িঘড়ি মশারিও খুলে ফেলা হয়। সেইসঙ্গে বেশ খানিকটা হৈ চৈ ভেসে আসে কানে। এমন তো হওয়ার কথা নয়! ঘুমের গভীরে তলিয়ে যাওয়ার আগেই জেগে ওঠতে বাধ্য হলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগে দেখি, আমার রুমে দাঁড়িয়ে অপরিচিত একজন তরুণী। হালকা পাতলা গড়ন। মুখে দুষ্টু দুষ্টু কিশোরী হাসি। চোখে-মুখে আলোর বিচ্ছুরণ। আমি বেশ অপ্রস্তত হয়ে যাই। ঠিক বুঝতে পারছিলাম না,আমি কি ঘুমিয়ে আছি নাকি স্বপ্ন দেখছি। সেটা বোঝার আগেই মিষ্টি কণ্ঠে শুনতে পেলাম, দুলাল ভাই, এত বেলা করে ঘুমালে চলবে? ওঠেন ওঠেন। আসেন কথা বলি। এভাবেই আধো ঘুম অধো জাগরণে পরিচয় ফারিয়া লারার সঙ্গে। এটাই অবশ্যই তার ধরন। যে কাউকেই চমকে দিয়ে বেশ মজা পেত। তার ভঙ্গিমা একদমই আনকমন। আমার ছোট বোন ছন্দার বান্ধবী লাজিনা মুনার বোন। খ্যাতিমান লেখিকা সেলিনা হোসেনের কনিষ্ঠা কন্যা। তবে তার সঙ্গে পরিচয় হলে অন্য সব পরিচয় হারিয়ে যেতে সময় লাগতো না। লারা নিজেই নিজের পরিচয়। প্রাণবন্ত, প্রাণোচ্ছ্বল ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা উজ্জ্বল একটি মেয়ে। মাটিতে পা থাকলেও লারা যেন সব সময় উড়ে বেড়াতো। অস্থির, চঞ্চল ও ছটফটে। তবে অসম্ভব স্মার্ট, ধারালো ও ঝলমলে। নতুন কিছু করার প্রতি তার ছিল অন্তহীন উৎসাহ ও উদ্দীপনা। কখনও থেমে থাকতো না। যে কোনো কাজেই নিজেকে অনায়াসে জড়িয়ে ফেলতো। কত দিকেই যে ছিল তার বিচরণ। ছোট্ট এই জীবনে তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার ছিল টইটম্বুর।

ঢাকা বিমানবন্দরে শ্রীলঙ্কার দীনেশ, নেপালের হরি, কাজী আলম বাবু, দুলাল মাহমুদ ও ফারিয়া লারা


১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়ালেখক সমিতির উদ্যোগে আয়োজন করা হয় সাউথ এশিয়ান স্পোর্টস প্রেস কমিশন (সাসপক)-এর সম্মেলন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তাতে অংশ নেয়। এই সম্মেলন আয়োজনে লারার উপস্থিতি আমাদেরকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা থেকে শুরু করে বিদেশি ডেলিগেটদের সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তার কোনো তুলনা ছিল না। ডেলিগেটরা চলে গেলেও তাদের সঙ্গে লারার সম্পর্ক কিন্তু অটুট থাকে। একবার তার সঙ্গে কারো পরিচয় হলে তাকে কেউ ভুলতে পারতেন না। আসলেই তাকে ভোলা যায় না। লারার চলে যাওয়াটা আমার কাছে বড় হয়ে এক ধাক্কা হয়ে আসে। সে সব সময় নতুন কিছু করতে চাইতো। নিজে ছিল একটা রঙিন প্রজাপতির মতো। তার স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার। পাইলট হয়ে উড়তেও শুরু করেছিল। জীবনের বিশাল আকাশে উড্ডয়নের মুহূর্তে হঠাৎই থেমে যেতে হয় তাকে। তার এভাবে থেমে যাওয়াটা ছিল খুবই কষ্টকর ও বেদনাদায়ক। তার কথা মনে পড়লেই মন খুব খারাপ হয়ে যায়। মনে পড়ে যায় টুকরো টুকরো স্মৃতি। বুকের মধ্যে বইতে থাকে দীর্ঘশ্বাস।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন