নিজের সম্পর্কে বলার তেমন কিছু নেই। প্রকৃতঅর্থেই জীবনে গর্ব করার মতো নেই কোনো অর্জন। যে জীবন যাপন করছি, তেমন জীবন আমার কাছে মোটেও কাঙ্খিত নয়। এ জীবন শুধু অপ্রাপ্তিতে ভরা। প্রাপ্তির মধ্যে আছে রাশি রাশি কল্পনা আর ধূসর পাণ্ডুলিপির মতো ধূসরিত স্বপ্ন। কল্পনায় কত কিছুই যে করি। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো যোগসূত্র নেই। আর স্বপ্নে কখনও আকাশ ছুঁয়ে ফেলি। আবার কখনও নেমে যাই পাতালেও। কখনও কখনও নিজেকে নিজেই মোটেও বুঝতে পারি না। বেজে চলি কেবলই অনুভূতির তারে তারে। তাতে কোনো সুর নেই। আসলে এক বিপন্ন বিস্ময় অন্তর্গত রক্তের ভিতরে খেলা করে। যা এড়িয়ে যাওয়া একদমই সম্ভব হয় না। যে কারণে কোথাও খাপ খাওয়াতে পারি না। মিলতে পারি না। মেলাতে পারি না।
জোছনা-জোনাকি-জীবনানন্দ দাশ আমাকে মুগ্ধ করে। জোছনার সঙ্গে খুব বেশি দেখা হয় না। জোনাকির সঙ্গে তো কোনো যোগাযোগই নেই। জীবনানন্দ দাশেও বিভোর থাকা হয় না। ঝুম বৃষ্টিতে খুব ভিজতে ইচ্ছে করে। ভিজতে পারি না। আইসক্রিম-চটপটি-ফুচকা-ঝালমুড়ি-আচার-চকলেটের মতো টক-ঝাল-মিষ্টি জাতীয় মুখরোচক খাবার খুবই ফেবারিট। এ কারণেই বোধহয় এর স্বাদ বলতে গেলে এখন পাওয়াই হয় না। রিক্সায় ঘুরতে ইচ্ছে করে। মন চায় দূরে কোথাও হারিয়ে যেতে। যাওয়া হয় না। কাশফুলের পরশ পেতে ইচ্ছে করে। পাওয়া হয় না। লজ্জাবতী গাছের লাজ ভাঙিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। ভাঙানো হয় না। প্রজাপতির পেছন পেছন ধাওয়া করতে ইচ্ছে করে। করা হয় না। নদীও খুব টানে। সাড়া দেওয়া হয় না। যা কিছু ইচ্ছে করে, যা কিছু ভালো লাগে, যা কিছু ভালোবাসি, তার সব কিছুর সঙ্গে কেন যেন আড়ি হয়ে যায়।
বুকের মধ্যে বয়ে বেড়াই মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদসিন্ধু’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সমাপ্তি’ গল্পের মৃম্ময়ী আর জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’কে। সেই বালক বয়সে ‘বিষাদসিন্ধু’ পড়ে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হই। কৈশোরেই প্রেমে পড়ে যাই চঞ্চলা মৃম্ময়ীর। আর তরুণ বয়স থেকেই হেঁটে চলেছি রহস্যময়ী বনলতা সেনের সন্ধানে। এর বাইরের জগতটা আমার খুব বেশি চেনা নয়। স্বপ্ন-কল্পনায়-ভালোবাসায় ভেসে বেড়াই নিজের গড়া ‘ভার্চুয়াল জগত’-এ। যেখানে আমি কেবলই একা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন