পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১

আনাহিতা




আমার খুবই ইচ্ছে ছিল মেয়ের বাবা হওয়ার। এ ব্যাপারে মৌন সম্মতি ছিল শাঙনির। আমার সন্তানের জননী হতে তার আপত্তি ছিল বলে কখনও মনে হয় নি। বরং এক ধরনের প্রশ্রয় ছিল। এমনকি আমরা দুজনের মেয়ের নামও ঠিক করে রাখি। খুবই আনকমন নাম। আনাহিতা। আনাহিতা ছিলেন প্রাচীন পারস্যের উর্বরতা, নিরাময় ও জ্ঞানের দেবী। শাঙনির জ্ঞানবুদ্ধি যথেষ্ট শাণিত। বিদেশি বই-পুস্তক পড়ার কারণে তার জানাশোনার পরিধি অনেক বেশি। যে কারণে এমন একটি সুন্দর নাম সে খুঁজে বের করতে পেরেছে। নামটি আমার দারুণ পছন্দ হয়। 

আমি স্বপ্ন দেখতে থাকি অনাগত কন্যাকে নিয়ে। কবে পৃথিবীতে আসবে, কীভাবে তাকে লালন-পালন করা হবে, সেটি হয়ে উঠে আমার সর্বক্ষণের ভাবনার বিষয়। আমি কি আমার সন্তানকে নিয়মিত দেখতে পারবো? কোলে নিয়ে আদর কি করতে পারবো? আমি যে তার পিতা, বড় হয়ে কন্যা কি তা জানতে পারবে? একটা দ্বিধা-দ্বন্ধ যে আমার ছিল, সেটা অস্বীকার করবো না। তবুও কন্যার পিতা হওয়ার জন্য আমি খুবই আকুলিত হই। 

তবে আমি যা করতে চাই, সাধারণত তা হয়ে উঠে না। হলেও সেটা মোটেও সাবলীলভাবে হয় না। কোথাও না কোথাও প্যাঁচ লেগে যায়। পদে পদে অনেক সমস্যা, সংকট ও প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়। আর যেভাবে আমি কন্যার পিতা হতে চাইছি, সেটি তো মোটেও সহজ-সরল পথ নয়। অনেক জট আছে। আছে জটিলতাও। তারপরও আমি আশাহীন নই। এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ শাঙনি। এমন খামখেয়ালি মেয়ে আমি অন্তত দ্বিতীয়টি দেখে নি। কিছু করতে চাইলে তাকে আটকানো যায় না। একটা একগুয়েমি মনোভাব তার আছে। 

শাঙনির রাশি কুম্ভর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, স্বভাবত শান্ত ও ঠাণ্ডা প্রকৃতির। প্রচলিত মতামত অমান্য করে আনন্দ পায়। অধিকতর গতানুগতিক মানুষগুলোর সঙ্গে হঠাৎ করে আকস্মিক ও খাপছাড়া আচরণ করে চমকে দিতে পছন্দ করে। স্বাধীনতাপ্রিয় এই ইউরেনাস মানুষগুলো বস্তুত মজার, লম্পট গোছের, মৌলিক, অভিমানী ও আত্মনির্ভরশীল। অন্য কারও দিকে ঝুঁকে পড়বে। তার আগে আপনাকে বোঝাতে সক্ষম হবে যে, আপনিই তার কাছে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। গুণের সমাবেশ না দেখে তারা বরং বন্ধুদের সংখ্যার দিকেই বেশি মনোযোগী। একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কোনো সম্পর্কেই তাদের স্থায়িত্ব থাকে না। 

এমন অভিমত আমার নয়। আমি কোনও জ্যোতিষী নই। এমন মন্তব্য পেয়েছি অনলাইনে। রাশি নিয়ে আমার কোনও আগ্রহ নেই। বিশ্বাস তো করিই না। তবে এ বিষয়ে একদম কৌতূহল যে নেই, তা বললে সত্যের অপলাপ হবে। রাশি নিয়ে শাঙনির তুমুল আগ্রহ আছে। কিছুটা চর্চাও করে। চর্চার জন্য তার গুরুও আছে। এই রাশি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফেসবুকে শাঙনির সঙ্গে আমার যোগাযোগ। তারপর তো তা গড়ায় অনেক দূর। যেহেতু আমরা সন্তানের জন্ম দিতে চেয়েছি, তা থেকে অনুমান করা যায়, আমাদের সম্পর্কের গভীরতা। শাঙনি কিন্তু কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। আমি কন্যার বাবা হতে পারি নি।

বিশ্বাস না করলেও রাশির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে শাঙনির বেশ মিল খুঁজে পেয়েছি। এমন মিল হওয়ার কারণ হিসেবে আমার মনে হয়েছে, কেউ যদি কোনো বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চর্চা করেন, তাহলে সে বিষয়ে তার একটা ভালো ধারণা হবেই। জ্যোতিষীরা মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে চর্চা করার কারণে তাদের যে বুৎপত্তি হয়, তার সঙ্গে বিভিন্ন রাশির মানুষের অনেকটাই মিল পাওয়া মোটেও অস্বাভাবিক নয়। 

শাঙনির সঙ্গে মেহবুবের সম্পর্ক তার বিয়ের পর থেকেই। পারিবারিক বন্ধু হিসেবে তাদের বাসায় মেহবুবের অবাধ যাতায়াত। একটি রাজনৈতিক দলের নেতা হিসেবে মেহবুব যথেষ্ট প্রভাবশালী। খুবই বেপরোয়া টাইপের। কোনো কিছু পরোয়া করে না। একটি খুনের মামলার আসামি হিসেবে দেশ থেকে পালিয়ে বিদেশে চলে যায়। সেখানেই মেহবুবের সঙ্গে মেহফুজের পরিচয়। বয়সে মেহবুবের চেয়ে মেহফুজ দশ-বারো বছর বড় হবে। কিন্তু চিন্তা-ভাবনায় দুজনেই একই রাজনৈতিক ঘরানার অনুসারী হওয়ায় সম্পর্কটা ঘনিষ্ট হতে বেশি সময় লাগে নি। 

দীর্ঘ দিন বিদেশে বসবাস করে উভয়ই ফিরে আসে। দেশে ফিরে কোনো কিছুতেই সুবিধা করতে পারছিল না মেহফুজ। গাড়ি সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা থাকায় একটি গাড়ির শোরুমে কাজ নেয়। যথেষ্ট বয়স হয়ে যাওয়ায় পারিবারিকভাবে শাঙনির সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তার তুলনায় সামাজিক অবস্থান, লেখাপড়া, স্মার্টনেসের দিক দিয়ে ঢের ঢের এগিয়ে ছিল শাঙনি। বড় চাকরি করলেও তার পিতা মন-মেজাজে খুবই রক্ষণশীল। এমন মনোভাবের কারণে শ্মশ্রুমণ্ডিত মেহফুজকে তার পরহেজগার মনে হয়। এ কারণে বিয়ের পাত্র হিসেবে তাকে সহজেই লুফে নেন। শ্মশ্রুমণ্ডিত হওয়াটাই তার কাছে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। 

একমাত্র কন্যার ইচ্ছে-অনিচ্ছার কোনও মূল্য দেওয়ার তাগিদ অনুভব করেন নি। অনিচ্ছুক শাঙনিকে একরকম জোরপূর্বক বিয়ে দিয়ে দেন। বিয়ে করতে বাধ্য হলেও ভিতরে ভিতরে একটা বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করতে থাকে শাঙনি। সেটা অপ্রকাশিতই থেকে যায়। এ বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রপক্ষ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে মেহবুব। তখন থেকেই শাঙনির ওপর চোখে পড়ে যায় তার। অনেকটা কাছাকাছি বয়সের শাঙনির সঙ্গে গড়ে উঠে হৃদ্যতা। 

মেহবুবের পরিবারও অবস্থাপন্ন। যে কোনো প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে বাড়িয়ে দেয় সহযোগিতার হাত। তার ওপর এক ধরনের নির্ভরশীলতা গড়ে উঠে মেহফুজের। এ সুযোগে শাঙনির সঙ্গে মেলামেশায় তার কোনো বাধা থাকে না। একটা পর্যায়ে মেহবুবের দাপটের কাছে একরকম নতজানু হয়ে থাকে মেহফুজ। তার সব কথাকে বেদবাক্য হিসেবে নেয়। 

লেখাপড়ায় দড় না হলেও কূটবুদ্ধিতে মেহবুব খুব ঝানু। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আর্থিকভাবেও নিজেকে আরো গুছিয়ে নিতে সক্ষম হয়। অর্থ-বিত্ত-গাড়ি থাকলে সব কিছুই সুলভ হয়ে যায়। মন যা চায়, তা অনায়াসেই করার সুবিধা পাওয়া যায়। সেই সুযোগটা পুরোপুরিভাবে সে কাজে লাগিয়েছে। ইতোমধ্যে শাঙনি ভূমিষ্ট করে একটি কন্যা সন্তান। মেহবুবও বিয়ে করে দুই সন্তানের জনক হয়। কিন্তু শাঙনির প্রতি তার আকর্ষণ কখনও থিতিয়ে যায় না। 

এমনিতেই শাঙনির তেমন পছন্দের পাত্র ছিল না মেহফুজ। পারিবারিক কারণে বিয়ে করতে হয়। তদুপরি তার কোনো কোনো আচরণ দুজনের মধ্যে ক্রমান্বয়ে একটি দূরত্ব তৈরি করে দেয়। সে স্থানটি সহজেই দখল করে নেয় মেহবুব। চাপাচাপির সংসারে হাঁপিয়ে উঠা শাঙনিকে স্বস্তির নিশ্বাস এনে দেয় মেহবুব। তার প্রাইভেট কারে নানান জায়গায় ঘোরাঘুরি করে। মেহফুজ যখন মেহবুবকে অনেক বেশি প্রশ্রয় দিতে শুরু করে, এ সুযোগে শাঙনিকে মেহবুব নিজের সম্পদ মনে করতে থাকে, সেটা শাঙনির কাছে বিরক্তিকর হয়ে ওঠে। 

চাপিয়ে দেওয়া কোনো কিছু সে মেনে নিতে পারে না। গতানুগতিকতাও তার পছন্দ নয়। একটু গোপনতা, একটু রহস্যময়তা, একটু প্রহেলিকা না থাকলে তার কাছে জীবনটাকে আলুনি আলুনি মনে হয়। যে কারণে মেহবুবের সঙ্গেও তার একটা ব্যবধান গড়ে ওঠে। একটা পর্যায়ে শাঙনির জগত ক্রমশ ছোট হয়ে আসতে থাকে। তখন দুনিয়াব্যাপী বাড়তে থাকে ভার্চুয়াল জগতের পরিধি। তার ফাঁদে ক্রমান্বয়ে ধরা দিতে থাকেন দুনিয়ার গরিষ্ঠ মানুষ। তাতে সবার জগতটা অনেক বিশাল হয়ে যায়। বদলে দিতে থাকে জীবনধারা। 

পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে সন্তানের জননী হওয়ার পর শাঙনির ছটফটে স্বভাবটা হ্রাস পেতে থাকে। অধিকাংশ সময় ঘরে থাকতে থাকতে এক ধরনের বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় খুঁজতে থাকে। সে সময় মুক্তি পাওয়ার জন্য স্মরণাপন্ন হয় কম্পিউটারের। এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতে মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে ওড়তে থাকে সীমাহীন অন্তরীক্ষে। কখনও গুগল মেসেঞ্জার, কখনও ফেসবুক, কখনও বিভিন্ন নেটওয়ার্কের ডানায় ভর দিয়ে আপন হয়ে উঠে নেটিজেনদের। 

এ সময়ই শাঙনির সঙ্গে সম্পর্ক হয় আমার। আমিও দুই পুত্রের জনক। একটি কন্যার জন্য আমার ব্যাকুলতা থাকলেও সেটা আর হয়ে উঠে নি। সংসারটা তো আর শান্ত কোনো নদী নয়। তার ভাঙাগড়া আছে। নানান কারণে আমার কাছে একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর লাগতে থাকে। নেটে নেটে শাঙনি আমার হৃদয়ে দাগ কাটে। তার কাছাকাছি হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। কোনো সম্পর্কই তো সাবলীল গতিতে বয়ে যায় না। তাতে উত্থান থাকে। পতন থাকে। সেটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। 

ঘটনাচক্রে আমার স্ত্রী শাঙনির বিষয়টি জেনে যাওয়ায় পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটা টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থার মধ্যে দিয়েই দুজন ঘনিষ্টতর হয়ে ওঠি। সম্পর্ক গভীরতর হওয়ার পর আমার চাওয়া অনুযায়ী আমরা আনাহিতাকে পৃথিবীতে আনার জন্য একমত হই। এ সম্পর্কটা জেনে যায় মেহবুবও। একদিন শাঙনি আর আমাকে একসঙ্গে দেখতে পায়। তার তো অফুরন্ত সময়। নেটওয়ার্কও বিস্তর। সে আমার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়। 

একদিন হুট করে সহকর্মী রাজন আমার কাছে জানতে চায়, আপনি কি মোহাম্মদপুরের মেহবুবকে চেনেন? আমি না চেনার কথা জানালে সে বলে, মেহবুব তো আপনাকে ভালোভাবে চেনে। আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে চাইলো। আমি বুঝতে পারি, আমার সামাজিক অবস্থান মাপতে চাইছে মেহবুব। সে তো রাজনীতির ঝানু কর্মী। হিসেব করে দেখে, বিদ্যমান অবস্থায় আমাকে কিছু করা তার জন্য কঠিন হয়ে উঠতে পারে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিও তার অনকূলেও নয়। এমনিতে চাপের মুখে আছে। আমার সঙ্গে এঁটে উঠতে পারবে না মনে করে তখন সে শাঙনির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করে। 

মেহফুজকেও আমার বিষয়টি জানিয়ে দেয়। কীভাবে যেন আমার ফোন নম্বর পেয়ে আমাকে ফোন করে মেহফুজ অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে বলে, ‘খানকির পোলা, ভালো হয়ে যা। না হলে তোর খবর আসে।’ আমি কোনো প্রতিত্তোর না দিয়ে সব কথা নিঃশব্দে শুনে যাই। দুজনের তীব্র চাপের কারণে শাঙনি পেরে উঠছিল না। ক্রমান্বয়ে আমার কাছ থেকে সরে যেতে থাকে। একটা পর্যায়ে আমাদের আর যোগাযোগ থাকে না। এমনকি সামাজিক মাধ্যমেও সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। 

অনেক বছর পর একদিন রাস্তায় শাঙনির সঙ্গে আমার হঠাৎ দেখা হয়ে যায়। রিক্সায় কোথাও যাচ্ছিল শাঙনি। হেঁটে আসছিলাম আমি। আমাকে দেখে রিক্সা থামায়। দেখতে পাই, বেশ উঁচু হয়ে আছে তার পেট। বুঝতে অসুবিধা হয় না খুব সহসাই আবারো সন্তানের জননী হতে যাচ্ছে শাঙনি। কিছুটা ম্লান ও বিষণ্ন মনে হয় তাকে। শুধু বললো, আমি এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি। আজ অফিসে সাপ্তাহিক মিটিং আছে। হাতে একদমই সময় নেই। সময়মতো পৌঁছাতে হবে। তাই তোমার সঙ্গে কথা বলতে পারছি না। পারলে ফোন করো। আর শোনো, আগের নাম্বারে ফোন দিও না। আমি বললাম, কেন? সে বললো, এ নাম্বারে ফোন করলে মেহবুব টের পেয়ে যাবে। নতুন একটি নাম্বার দিয়ে বললো, এটি অফিসের নাম্বার। এ নাম্বারে যোগাযোগ করো। আমি কিছু বুঝতে না পেরে তার দিকে অবুঝের মতো তাকিয়ে থাকি। 

তখন চলতে শুরু করেছে তার রিক্সা। আমি চিন্তার সাগরে হাবুডুবু খেতে থাকি। অনেক কথা আমার মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে। শাঙনি কি তাহলে মেহবুবকে বিয়ে করেছে? স্বামী হিসেবে কি মাহবুব তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়? না হলে সে কেন শাঙনির ফোনে আঁড়ি পাতে? তাকে কেন ভয় পায় শাঙনি? কোনো কিছুর কূলকিনারা করতে পারি না আমি। ফোন করবো কি করবো না ভেবে সন্ধ্যার দিকে শাঙনিকে তার দেওয়া নাম্বারে ফোন করি। 

ফোন রিসিভ করে শাঙনি বলে, একটু পরে করো। কিছুক্ষণ পর ফোন করার পর শাঙনি বললো, মেহফুজ বাসায় ছিল। তোমার সঙ্গে কথা বলবো বলে তাকে বাজারে পাঠালাম। বুঝলাম, মেহফুজ এখন তার ইচ্ছের পুতুল। আমি বললাম, কিছুই তো বুঝতে পারছি না। তুমি এখন কার নিয়ন্ত্রণে আছো? শাঙনি বললো, এর মধ্যে অনেক কিছু ঘটেছে। এই অল্প সময়ে তোমাকে সব বলা সম্ভব নয়। মেহফুজ স্বামী হিসেবে যথারীতি আমার সঙ্গেই আছে। সে এখন কিছু করে না। অলিখিতভাবে আমাকে মেহবুবের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয়। 

তোমার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি জেনে যাওয়ার পর থেকেই আমার ওপর সে নজরদারি করে। তাতে আমি কোনো মাইন্ড করি না। বোধহয় গভীরভাবে ভালোবাসে বলেই এমনটি করে। মেহফুজের তো কোনো সামর্থ্য নেই। এমনিতেও তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্কও নেই। শুধু একই ছাদের নিচে থাকি। আমাকে কানায় কানায় ভরিয়ে দিতে কার্পণ্য করে না মেহবুব। সে না থাকলে আমার জীবনটা প্রাণহীন হয়ে যেত। তবে তুমি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছো, এটা জানতে পারলে পরিণতি ভয়াবহ হবে। মেহবুবের ক্ষমতা অনেক। এমনকি খুন করতেও পিছপা হবে না। তুমি সাবধানে থেকো। একনাগাড়ে অনেকক্ষণ কথা বলে যায় শাঙনি। 

কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে এক পর্যায়ে আমি জানতে চাইলাম, তোমার পেটে এখন কার সন্তান? শাঙনি একটুখানি হাসি দিয়ে বলে, সেটা তুমি বুঝে নেও। আর কিছু জানতে না চেয়ে আমি বলি, তোমার কাছে একটা অনুরোধ, তোমার সন্তান যদি মেয়ে হয়, তার নাম অন্তত আনাহিতা রেখো না। শাঙনি বলে, কেন রাখবো না? এ নাম তো আমার। আমার ভালোবাসার নাম। আমি বলি, তুমি রাখলেও আনাহিতার পিতা তো আমার হওয়ার কথা ছিল। এ কথায় নিরুত্তর থাকে শাঙনি। তার মৌনতাকে সম্মতি হিসেবেই ধরে নেই। কন্যার পিতা না হলেও এ নামটি আমার অপ্রাপ্তির স্মৃতির স্মারক হয়ে থাকবে। এটাই ছিল আমার সান্ত্বনা। 

এরপর আর তার সঙ্গে আমার আর কখনও যোগাযোগ হয় নি। যদিও আমরা একে অপরের ফ্রেন্ড নই, তবুও ফেসবুকে দেখতে পেয়েছি, শাঙনি দ্বিতীয় একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নাম রেখেছে আনাহিতা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন