পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

বুকের ভিতর মেঘ জমে যায়

 


এখন আর সেই আক্ষেপটুকু নেই। চাইলেই আমি ইচ্ছেমতো আকাশ দেখতে পারি। করোনাকাল আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছে। কর্মসময় সীমিত হয়ে পড়ায় আমার এখন অফুরান অবকাশ। কত কাল পর যে এমন অবসর পাওয়া! আমি মনভরে আকাশ দেখি। কত যে তার রং। কত যে তার রূপ। কত তার মোহময়তা। মেঘের শিল্পকর্ম দেখে আমার আশ মিটতে চায় না। পেখম মেলে কী সুন্দরভাবে উড়ে উড়ে যায় বিচিত্র মেঘমালা। বিশাল ক্যানভাসে মেঘের তুলিতে আঁকা হয় জগতের সেরা সেরা শিল্পকর্ম। আলো আর আঁধারের সমন্বয়ে ফুটিয়ে তোলা হয় অনিন্দ্যসুন্দর সব চিত্রকলা। যদিও এই শিল্পকর্ম ক্ষণিকের। প্রতি মুহুর্তে বদলে যায় তার দৃশ্যপট। তবে এত এত শৈল্পিক চিত্রপট দেখতে পাওয়ার মজাই আলাদা। হৃদয়টাকে রাঙিয়ে দিয়ে যায় অপার্থিব এক ভালো লাগায়। আকাশের পটে কখনো-সখনো আভাসিত হয় কোনো মুখচ্ছবি বা অবয়ব। সেটা সত্যি নাকি মায়াবী বিভ্রম, ঠাওর করতে পারি না। ইদানিং তো আকাশের শোভা বাড়িয়ে দিয়েছে নানান আকারের, নানান রঙের, নানান মেজাজের ঘুড়ি। কখনো কখনো ইচ্ছে করে ঘুড়ি হয়ে খুব কাছ থেকে দেখে আসি মেঘের শিল্পকর্ম। তা তো আর সম্ভব নয়। তাই বুকের ভিতর থরে থরে সাজিয়ে রাখি মেঘের চিরায়ত সব চিত্রকলা। ইহজাগতিক কোনো সঞ্চয় তো আমার নেই। আমার ভাণ্ডার পরিপূর্ণ প্রকৃতির অলৌকিক সব সৌন্দর্য দিয়ে। যখন শূন্য শূন্য লাগে, তখন তাতে অবগাহন করি।


ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখতে দেখতে মনটাও অনেক সময় তার মতো বিস্তৃত হয়ে যায়। ভিতর থেকে মুছে যায় জাগতিক সব বিষয়-আশয়। তখন নিজেকে মায়াবী জগতের বাসিন্দা মনে হতে থাকে। কল্পনার বাহনে পাড়ি জমাই দূরে দূরে। ঘুরে আসি অমরধামের অনাবিল সেই জগত থেকে। ফিরে এলে দেখতে পাই তার রূপবদল ঘটে গেছে।  




বর্ষার আকাশে পাওয়া যায় ভিন্ন রকম মাধুর্য। জলরঙে আঁকা চিত্রপটগুলো অসাধারণ লাগে। কেন যেন মনে হয়, মহাকাব্যিক সব শিল্পকর্ম সৃষ্টি হয় সাদা-কালোর সংমিশ্রণে। সেটার সার্থক প্রয়োগ ঘটে মেঘের তুলিতে। ছেঁড়া ছেঁড়া কালো কালো রঙের মেঘের কোলাজ কী যে অপূর্ব লাগে। তা দেখে মন চলে যায় কোন সুদূরে। মনে পড়ে যায় স্মৃতিময় শাওন দিনগুলোর কথা। বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দিলে নেমে আসতে হয় বাস্তবের মাটিতে। সকাল থেকে ঘনকালো মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে আছে চারপাশ। অবিরাম ঝরছে শ্রাবণধারা। কখনো অনুচ্চ। কখনো গুরুগম্ভীর। কখনো ঠাসবুনোট। মেঘের শিল্পকলা যেমন দৃষ্টির সৌন্দর্য, তেমনিভাবে বৃষ্টিপাতের সুরধ্বনি হৃদয়ের আরাম। কতভাবেই না বেজে ওঠে তার স্বরমাধুর্য। বৃষ্টি খুলে দেয় বুকের জমাটবাঁধা অর্গল। তখন নিমগ্ন হতে ইচ্ছে করে সুরের ঝর্ণাধারায়।


আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে

জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।

এই চঞ্চল সজল পবন-বেগে উদ্ভান্ত মেঘে

মন চায়

মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে

মেঘমল্লার সারা দিনমান।

বাজে ঝরনার গান।

মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার

খেলা-- মন চায়

চিরঋণে।



মেঘের খেলা দেখতে দেখতে আর বৃষ্টির সুরধ্বনি শুনতে শুনতে কেন যেন বুকের ভিতর মেঘ জমে যায়। চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে অশ্রু। সেটা আনন্দের না বেদনার, আমি ঠিক বুঝতে পারি না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন