পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

যেখানে থেমে নেই রক্তঝরা



সেই ১৯৪৮ সাল থেকে রক্ত ঝরছে ফিলিস্তিনে।

ঝরেই চলেছে।

কখনই থামছে না।

সব রক্তই মিশছে ভূমধ্যসাগরে।

না হলে এই রক্ত জমে জমে সৃষ্টি হতো আলাদা একটি রক্তনদী।

সভ্য দুনিয়ায় চলছে নিদারুণ এক অসভ্যতা।

কোনো বিবেক-বিবেচনা নেই।

কোনো আইন-কানুন নেই। 

কোনো বাছ-বিচার নেই।

একটাই মিশন।

যেভাবে পারো হত্যা করো। 

নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে শিশুদের।

নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ নেওয়া হচ্ছে নারীদের।

নৃশংসভাবে খুন করা হচ্ছে সব বয়সী মানুয়কে।

অকারণেই জীবন দিতে হচ্ছে 

নতুবা 

ক্ষত-বিক্ষত হতে হচ্ছে।

পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে চিরকালের জন্য।

কোনো প্রতিকার নেই।

সাফাই গেয়ে চলেছেন জন কেরিরা। 

যেন মানুষ নয়, এক একটি সংখ্যা।

এই সংখ্যা যত কমবে, ততই নিজেদের আধিপত্য নিরঙ্কুশ হবে। 

নিরাপদ অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েও রেহাই পাওয়া যাচ্ছে না।

কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই।

হত্যালীলা চলছেই। 

এ নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ নেই

উৎকণ্ঠা নেই।

আছে অশালীন উল্লাস।

আছে বিবেকহীন তৎপরতা। 

নিয়তিরও যেন পরিহাস করছে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে।

ভূখণ্ড হারিয়েছে।

গৃহহারা হয়ে শরণার্থী জীবন যাপন করছে। 

দখলদারদের জবরদস্তির শিকার হতে হচ্ছে।

কোথাও কোনো আশার আলো নেই।

বরং ক্রমান্বয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে।  

বৃটিশদের বেঈমানির কারণে ফিলিস্তিনিদের আজ এই পরিণতি।

তাদের কূট-কৌশলের কারণে ফিলিস্তিনিরা নিজ দেশে হয়ে যায় পরবাসী।

আর এতে ইন্দন দিয়ে আসছে আমেরিকনারা।

অর্থ দিয়ে, অস্ত্র দিয়ে, রাজনীতি দিয়ে। 

আরব ভূখণ্ডে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম দেওয়া হয় ইসরাইল নামে একটি দানবীয় রাষ্ট্রের। 

নিধিরাম সর্দার জাতিসংঘকে ব্যবহার করে অবৈধ এই দেশটির জন্ম দেয় ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তি। 

এরপর থেকে ইহুদি এই রাষ্ট্রের সীমানা বেড়েই চলছে। 

বাড়ছে অত্যাচার, নির্যাতন, নিপীড়ন।

বাড়ছে জবরদখল। 

বাড়ছে হত্যাকাণ্ড।

ক্রমান্বয়ে উচ্ছেদ হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।

দেশে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য আর তাদের মিত্রদের কি আকুলতা!

আহ্ রে কি দরদ!

আর তাদের সব রকম সাহায্য ও সহযোগিতায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে যে নৃশংসতা, যে নির্মমতা, যে তাণ্ডবলীলা চলছে, সে ব্যাপারে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

যেন হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করছে ইসরাইল।

আর ইসরাইলকে জামাই আদর করাই তাদের মূলমন্ত্র।

এই ভণ্ডামির কোনো তুলনা হয় না।

এভাবেই তারা সারা দুনিয়ায় খবরদারি করে আসছে।  

সবচে’ বিস্ময়কর হলো, আরব দেশগুলোর ভূমিকা।

আরব ভূখণ্ডের পেটের মধ্যে বিষ ফোড়ার মতো বিস্তৃত হচ্ছে একটি দেশ,

এই দেশটি একদিন তাদেরও সর্বনাশের কারণ হতে পারে, 

অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোনো হেলদোল নেই।

ক্ষুদ্র স্বার্থের কাছে বিকিয়ে দিয়েছে নিজেদের। 

প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনিদের জীবন ঝরছে, ঝলসে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, 

এ নিয়ে তাদের সামান্যতম বিকার নেই।

ফিলিস্তিনিদের অসহায় আর্তনাদ পৌঁছাচ্ছে না সিরিয়া, জর্ডান, মিসরে.....।

প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় না পেয়ে নির্বিচারে খুন হচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা। 

এই ফিলিস্তিনিরা যেন তাদের কেউ নয়। 

এঁরা যেন তাদের সহোদর নয়।

এঁরা যেন মুসলমান নয়। 

ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তো দিচ্ছেই না, 

বরং তারা যাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, সে ব্যাপারে প্রকারান্তরে অবদান রাখছে।

শুধু ইঙ্গ-মার্কিন স্বার্থই রক্ষা করছে না, তাদের রীতিমতো প্রতিপালন করছে।

সৌদি আরবসহ বিভিন্ন আরব দেশে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে আমেরিকানরা।

আরবদের নীরবতা দেখে মনে হয়

যেন ফিলিস্তিনিরা শেষ হয়ে গেলে মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে।

ইসরাইলের স্বার্থ রক্ষা করাই তাদের এবাদত।

অথচ একযোগে আরব রাষ্ট্রগুলো রুখে দাঁড়ালে ফিলিস্তিনিদের এতটা অসহায় হয়ে পড়তো না।

এই যখন অবস্থা, তখন আমরা কী করতে পারি?

কিছুই করতে পারছি না।

ফিলিস্তিনিদের মতো এক সময় আমাদের এই অবস্থা ছিল।

আমরা সেই অবস্থা থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তি পেয়েছি।

আমরা বিশ্বের পরাশক্তির একটি অংশের সমর্থন পেয়েছিলাম। 

প্রতিবেশী দেশের আশ্রয় আর সহযোগিতা পেয়েছিলাম।

তা না হলে আমাদেরও ফিলিস্তিনিদের মতো রক্তপাতের মধ্যে কাটাতে হতো বিনিদ্র রজনী।

তাই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আমরাও একাত্ম অনুভব করি।

মনে-প্রাণে তাদের বিজয় কামনা করি। 

ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্তপাত দেখে আমাদের বুকেও রক্তক্ষরণ হয়। 

চোখ ভিজে যায় জলে।

দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া ছাড়া এই নৃশংসতা সইতে পারা যায় না।

ফিলিস্তিনিদের জন্য আমাদের দেশে কত কান্না-কাটি করা হয়। 

পড়া হয় দোয়া-দরুদ-মোনাজাত। 

প্রত্যাশা করা হয় অলৌকিক কোনো কিছুর।

বছরের পর বছর এমনটি কায়মনোবাক্যে চাওয়া হয়ে আসছে। 

কিন্তু তাতে ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।

বরং দিনে দিনে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে তাদের পরিসর। 

সীমিত শক্তি নিয়ে বিশ্বের পরাশক্তির বিপক্ষে লড়াই করার মতো শক্তি-সামর্থ্য তাদের কোথায়?

কেউ তাদের প্রতি বাড়িয়ে দিচ্ছে না সহযোগিতার হাত। 

তবুও তাদের প্রতিবাদ থামছে না

প্রতিরোধ স্তিমিত হচ্ছে না। 

পরাভবও মানছে না।

জীবন ঝরছে। জন্ম হচ্ছে নতুন জীবনের। 

কিন্তু এভাবে কত দিন চলবে?

কবি নবারুন ভট্টাচার্যের কবিতার মতো অক্ষম বেদনা নিয়ে ফিলিস্তিনিরা বলতে পারেন,

এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না

এই জল্লাদের উল্লাসমঞ্চ আমার দেশ না

এই বিস্তীর্ণ শ্মশান আমার দেশ না

এই রক্তস্মাত কসাইখানা আমার দেশ না।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন