সে এক শ্বাসরুদ্ধকর সময়। সামরিক শাসনে নিেস্পষিত দেশের মানুষ। দম বন্ধ করা এমন এক পরিবেশে মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেয়ার জন্য মানুষ ছটফট করতে থাকে। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিসহ সৃজনশীল নানা কাজে প্রতিবাদের একটি প্রছন্ন সুর। টিএসসি চত্বর আর বাংলা একাডেমির বইমেলায় দ্রোহের আগুনে ফুটতে থাকে প্রতিবাদী তারুণ্য। লিটল ম্যাগাজিনেও লেগেছে আগুনের হল্কা। বুকের মাঝে জ্বলে ওঠা ক্ষোভের আগুন অস্তমিত করার সৃজনশীল মাধ্যম হয়ে উঠেছে লিটল ম্যাগাজিন। এরশাদীয় শাসনামলের শুরুর দিকে কলেজের ছাত্র হলেও পড়ালেখার দিকে খুব একটা মন নেই। দুর্বৃত্ত সময়ের পাঁকে হাবুডুবু খেতে থাকে আমাদের তারুণ্য। আর এ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকি আমরা। ঢাকার শের-এ-বাংলা নগর এলাকাটা নিরুপদ্রব হলেও লিটল ম্যাগাজিনের একটা হাওয়া আমাদেরও ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়। আমাদের বুকের মাঝেও তখন ক্ষোভ, যন্ত্রণা, ঘৃণা এবং সবকিছু ভেঙ্গেচুরে নতুন কিছু গড়ার স্বপ্ন। আর এ সবকিছু শিল্পিতভাবে প্রকাশের জন্য বেছেনেই লিটল ম্যাগাজিনকে। কোনো কিছু না জেনেই সাহিত্য সংকলন বের করার জন্য বন্ধুদের নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি। কোনো লেখককেই বলতে গেলে চিনি না। কোনো বিজ্ঞাপনদাতার সঙ্গেও পরিচয় নেই। পত্রিকা কীভাবে ছাপা হয়, তাও জানি না। কিন্তু তাতেও কমতি নেই উৎসাহের। যেভাবেই হোক, সাহিত্য সংকলন বের করতে হবে। মনোভাবটা এমন, এ সংকলন বের না হলে বাংলা সাহিত্যের বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। জেনে-শুনে তো বাংলা সাহিত্যের ক্ষতি হতে দিতে পারি না! সে সময় পত্র-পত্রিকায় যারা নিয়মিত লেখালেখি করতেন, লেখার জন্য একে একে তাঁদের ডেরায় হানা দিতে থাকি। লেখার সঙ্গে পরিচিত থাকায় লেখকরা তখন আমাদের কাছে স্বপ্নলোকের মানুষ। পরম বিস্ময় নিয়ে প্রতিদিনই কোনো না কোনো লেখকের সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে। কারো কারো কথায় উৎসাহিত হলেও আবার কারো কারো ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হই। তবে নিরুৎসাহিত হই না।
এমনিভাবে সম্ভবত বাংলা একাডেমির আঙ্গিনায় পরিচয় কবি আবিদ আজাদের সঙ্গে। চোখে-মুখে একটা ভাবালুতা। উৎকণ্ঠা বা বিষাদের ছায়াও কি দেখেছিলাম? মুখে পান। একজন আধুনিক কবির মুখে পান! ফর্সা মুখে ঠোঁট দুটো রক্তিম হয়ে আছে। কথার মাঝে হালকা বাবরি চুলে কিছুক্ষণ পর পর হাত দিয়ে ব্রাশ করতে থাকেন। কথা বলেন মৃদুস্বরে। সবকিছুতেই একটা কবিসুলভ অভিব্যক্তি। তখন তিনি কবি এবং রেডিও বাংলাদেশের ‘উত্তরণ’ অনুষ্ঠানের গ্রন্থনা করার জন্য খ্যাতিমান। তাঁর কাছে কবিতা চাওয়ার পর তিনি জানতে চাইলেন সংকলনটি কোথা থেকে ছাপাবো? জানালাম, আমরা এখনো সিদ্ধান্ত নেইনি। লেখা ও বিজ্ঞাপন পাওয়ার পর সবকিছু ঠিক করবো। তিনি জানালেন, শেখ সাহেব বাজারে তাঁর একটি প্রেস আছে। ঠিকানা দিয়ে যোগাযোগ করতে বললেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলে সংকলন প্রকাশ করার ব্যাপারে অনেকখানি আশ্বস্ত হলাম। একজন প্রেস মালিক সর্বোপরি নামজাদা একজন কবির সহযোগিতা পাওয়া যাবে জেনে আমরা উৎসাহে টগবগিয়ে ফুটতে থাকি। এরপর তাঁর ‘শিল্পতরু’ প্রেসে ঢুঁ মারার পর জীবনের অনেকগুলো দিন অন্যরকমভাবে কেটে যায়। ৯৮ নবাবগঞ্জে কবি আবিদ আজাদের ঢিমে-তেতলা তালে চলা প্রেসটি তখন অনেক তরুণ লেখকের আড্ডাস্থল হয়ে ওঠে। তাঁর সম্পাদিত ‘কবি’ নামে একটি সাহিত্য সংকলন তখন নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এ সংকলনে লেখা ছাপা এবং শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে প্রথম বই প্রকাশের আশায় তরুণ লেখকরা নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। প্রকাশের সৃষ্টিশীল যন্ত্রণায় অনেক তরুণকে তখন ছটফট করতে দেখতাম। সে সময় লিটল ম্যাগাজিন ছাড়া তরুণ লেখকদের লেখা প্রকাশের ক্ষেত্র ছিল খুবই সীমিত। কবি আবিদ আজাদ তাদের কাছে ছিলেন পরম আশ্রয়। তখন দেখা উঠতি অনেক লেখকের মুখ দু’দশকের ব্যবধানে অনেকটাই ঝাপসা হয়ে গেছে। তবে কবি রিফাত চৌধুরী, রাজু আলাউদ্দিন, কাজল শাহনেওয়াজের কথা এখনো মনে পড়ে। আর কেউ না থাকলেও রিফাত চৌধুরীকে পাওয়া যেতোই। কবি আবিদ আজাদের অনুপস্থিতিতে প্রেসের দেখাশোনা অনেকটা অলিখিতভাবে রিফাত চৌধুরীই করতেন। দরবেশ দরবেশ চেহারার রিফাত চৌধুরীকে এখন টেলিভিশনের বিভিন্ন নাটকে দেখা যায়। কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ আসতেন তাঁর গ্রন্থের প্রুফ দেখতে। সে সময় তাঁর মাছ সিরিজবিষয়ক নিরীক্ষাধর্মী একটি কবিতার বই প্রকাশের তোড়জোড় চলছে। তাঁর মাছের ভাগ আমরা আমাদের সংকলনের জন্যও পেয়ে যাই। লেখক না হয়েও কবি আবিদ আজাদের সান্নিধ্যে একটা কাব্যময় পরিবেশের প্রলোভনে জড়িয়ে পড়ি। সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ ঢিলে হয়ে পড়লেও প্রতিদিনই কী এক মোহে ছুটে যাই শেখ সাহেব বাজারে। ঘনিষ্ঠ একটা সম্পর্ক দাঁড়িয়ে যায় কবি আবিদ আজাদের সঙ্গে। এই মেধাবী কবি তখন জীবন সংগ্রামে লিপ্ত। ছোট্ট একটি ঘরে নিজের প্রেসটি মোটেও রমরমা নয়। সময়টা লেটার প্রেসের। সীসার টাইপ আর ট্রেডল মেশিনে ছাপা হতো। বোধহয় দু’জন কর্মচারী ছিল। কাজের তেমন চাপ নেই। টুকটাক কাজ। অধিকাংশই শিল্পতরু প্রকাশনীর। অখ্যাত কিংবা গুরুত্বহীন কোনো কোনো লেখকের গ্রন্থও প্রকাশ হতে দেখেছি। গ্রাসাচ্ছেদন করার জন্য লেখককে বাধ্য হয়ে নানা জায়গায় ছুটতে হয়। কেন জানি না, ধীরে ধীরে আমিও লেখকের প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে যাই। কখনো সোনালী ব্যাংকে রম্যলেখক লুৎফর রহমান সরকারের কাছে, কখনো অগ্রণী ব্যাংকে সাহিত্য-সমালোচক নূরুল করিম খসরু, কখনো বেইলি রোডে রেডিও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রমে কবি মুস্তফা আনোয়ারের কাছে, কখনো দৈনিক বাংলায় কবি আহসান হাবীব, মাঝে মধ্যে কবি শামসুর রাহমান, কখনো নবারুণ ও সচিত্র বাংলাদেশে কবি আবদুস সাত্তার ও কে. জি. মোস্তফার কাছে এবং প্রায়শই জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রে শিল্পী আবদুর রৌউফ সরকারের কাছে। এ রকম কতজনের কাছেই যে যেতেন। সারাদিন নানা জায়গায় ছোটাছুটি করতে করতে তাঁর বেলা কেটে যেত। কত দুপুর যে না খেয়ে কাটিয়ে দিয়েছেন। আর প্রতিদিনের গন্তব্য ছিল আগারগাঁওয়ের রেডিও বাংলাদেশ। রেডিওতে দীর্ঘদিন যাবৎ নিয়মিত স্ক্রিপ্ট লিখতেন। সম্ভবত এটা ছিল তাঁর নিয়মিত আয়ের উৎস। রিকশায় চড়তে খুব পছন্দ করতেন। সাধারণত সর্বত্রই ছোটাছুটি করতেন রিকশায়। নানা কোলাহলের মাঝে রিকশা জার্নির সময় খুঁজে নিতেন নির্জনতা। এ সময় তিনি ডুব দিতেন মনের মাঝারে। তাঁকে দেখলে মনে হতো সারাক্ষণ কবিতায় মশগুল। ভেতরে ভেতরে বুঝিবা শব্দের খেলায় মেতে থাকতেন। কখনো সখনো আনমনে উচ্চারণ করতেন মনে মনে সাজানো নতুন কবিতার দু’একটি পঙ্ক্তি। মাঝে মাঝে বিষণ্ন হয়ে যেতেন। বলতেন, আপনার ভাবীর শরীরটা ভালো না। অন্তর্মুখী স্বভাবের কারণে বিস্তারিত কিছু জানতে চাইতাম না। শেখ সাহেব বাজারে প্রেসের লাগোয়া তাঁর বাসা ছিল। অনেক সময় কাজের লোকের সঙ্গে ছোট ছেলেটি এলে তাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতেন। সন্তান বাৎসল্যে উজ্জ্বল হয়ে উঠতো তাঁর ফর্সা মুখম-ল। ঠোঁটের কোণে খেলে যেত মৃদু হাসি। সন্তানের প্রতি একজন কবির স্নেহ ও ভালোবাসার প্রকাশটুকু আমাকে মুগ্ধ করতো। অভাব-অনটন আর দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝেও প্রেসের ছোট্ট পরিসরে রাখা একটি টেবিলে বসে কবিতা লিখতেন। তখন তাকে মনে হতো একজন ঘোর লাগা উদাস মানুষ। জীবনের এই টানাপড়েনের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে স্মরণীয় সব কবিতা। মাঝে-মধ্যে চা সহযোগে পুরান ঢাকার ডালপুরি কিংবা বাকরখানি দিয়ে আপ্যায়িত করতেন। কবি আবিদ আজাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ায় আমাদের সাহিত্য সংকলন ‘আবাহন’-এর কাজের গতি খুবই মন্থর হয়ে পড়ে। ততদিনে আমার বন্ধুরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। আমি অবশ্য হাল ছাড়িনি। আমার তখন অভিজ্ঞতা হচ্ছে নতুন এক জগতের। যে জগত সৃষ্টির, আনন্দের। নতুন উদ্দীপনা নিয়ে করছি লেখা সম্পাদনা। শিখছি প্রুফ দেখার কাজ। কবি আবিদ আজাদের সৌজন্যে রেডিও বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনুষ্ঠানেও আমার স্ক্রিপ্ট লেখার অভিজ্ঞতা হয়ে যায়। ১৯৮৪ সালের ৩ মার্চ রাত ৯টায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান শ্রবণী’তে আমার লেখা সম্প্রচারিত হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডকে নিয়ে লিখেছিলাম। এভাবেই উদ্দেশ্যহীনভাবে দিনগুলো পেরিয়ে যেতে থাকে। আমাদের সংকলন প্রকাশ করতে কেন যেন বছরখানেক লেগে যায়। এই সংকলনে যাদের লেখা ঠাঁই পায়, সম্পাদক হয়েও তাদের কাউকে কাউকে আমিও চিনতাম না। কবি আবিদ আজাদ তাঁর পরিচিত অনেক তরুণ ও প্রতিভাবান লেখকের লেখা আমাদের সংকলনে প্রকাশের জন্য দেন। তাঁর ভাণ্ডারে সবসময় থরে থরে জমা থাকতো বিভিন্ন লেখকের গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী এবং বিভিন্ন শিল্পীর ব্লক করা স্কেচ। আমাদের সংকলনের কভার করে দেন কবির পরিচিত শিল্পী আব্দুর রৌউফ সরকার। কবি আবিদ আজাদ অনেক সম্ভাবনাময় লেখক ও শিল্পীকে নানাভাবে পরিস্ফুটিত করেছেন। এ কারণে অনেক লেখক ও শিল্পীর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই। ইতোমধ্যে শেখ সাহেব বাজার থেকে প্রেসটি শিফট করে নিয়ে আসেন দৈনিক আজাদ অফিসের উল্টো দিকে ঢাকেশ্বরী রোডে। আগের তুলনায় কাজের পরিধি কিছুটা বাড়তে থাকে। সংসারে সবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য তাঁর চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। তবে আর্থিক সচ্ছলতার পেছনে হরদম ছুটলেও কবিতা লেখা কখনোই থেমে থাকেনি। পত্র-পত্রিকায় নিয়মিতই লিখতেন। আমরা যারা কবিতা বুঝতাম না; কিন্তু বোঝার একটা আকুলতা ছিল, তাদের কাছে কবি আবিদ আজাদের কবিতার আলাদা একটা আবেদন রয়েছে। কবিতার সূক্ষ্ম কারুকাজ আর অন্তর্নিহিত বাণী আমাদের ভোঁতা বোধকে স্পর্শ করতে না পারলেও তাঁর কবিতা অন্তরকে স্পর্শ করে যায়। তাঁর কবিতার দেহখানি লাবণ্যময়, সুষমামডিত। ছন্দময় তো বটেই, একটা সুরেলা অনুরণন পাওয়া যায়। পড়তেও ভালো লাগে। প্রচ- গরমে অতীষ্ঠ হয়ে ওঠার পর হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে মন-প্রাণ যেমন স্বিগ্ধতায় ভরে যায়; তেমনিভাবে আবিদ আজাদের কবিতা দিনযাপনের আর প্রাণধারণের গ্লানির মাঝে আমাদের অন্তরকে পরিশোধিত করে দেয়। তাঁর কবিতার িস্বগ্ধতা দিয়ে, মাধুর্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে নিজের একটা স্থান যে পাকাপোক্ত করে নিয়েছেন, তা বুঝতে পারতাম কবি আহসান হাবীব, কবি শামসুর রাহমান, কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দ প্রমুখ তাঁকে পছন্দ করতেন এবং দারুণভাবে প্রশ্রয় দিতেন। তাঁর কবিতার বইয়ের নামকরণ থেকে অনুধাবন করা যায় তাঁর কাব্যভাষা। ঘাসের ঘটনা (১৯৭৬), আমার মন কেমন করে (১৯৮০), বনতরুদের মর্ম (১৯৮২), শীতের রচনাবলী (১৯৮৩), আমার স্বপ্নের আগ্নেয়াস্ত্রগুলি (১৯৮৭), তোমাদের উঠোনে কি বৃষ্টি নামে? রেলগাড়ি থামে (১৯৮৮), ছন্দের বাড়ি ও অন্যান্য কবিতা (১৯৮৭) প্রভৃতি গ্রন্থ বুকের মাঝে এমনিতেই ছন্দের দোলা দিয়ে যায়। কবিতা ছাড়াও গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, কাব্যনাট্য লিখেছেন। গ্রন্থের সংখ্যা অর্ধ-শতাধিক। কিন্তু কবি হিসেবেই তাঁর সুখ্যাতি। সত্তর দশকের অন্যতম সেরা রোমান্টিক কবি তিনি। কিশোরগঞ্জ থেকে আসা এই কবির কবিতায় গ্রামীণ সহজিয়া জীবনধারার সঙ্গে শহরের নাগরিক জীবনের মেলবন্ধন ঘটেছে। ‘এক স্তব্ধতা থেকে আরেক তপ্ত স্তব্ধতায়’ পা দিয়ে ঢাকা শহর তাঁর কাছে হয়ে ওঠে ‘জরি-চুমকির মতো ঝলমলে কবিতার রাজধানী।’ ‘আত্মরক্ষামূলক যুৎসই নিভৃতি’ হিসেবে তিনি বেছে নেন কবিতাকে। আর এ কারণে পাঠকরা তাঁর কবিতায় শুনতে পেয়েছেন নতুন কণ্ঠস্বর। অন্য সবার চেয়ে তাঁর বলার ভঙ্গিটিও আলাদা। জীবনযাপনের কঠিন এক সময়কে পেছনে ফেলে যখন তিনি একটুখানি থিতু হয়েছেন, যখন তাঁর কবিতায় নিজেকে পুরোপুরিভাবে সঁপে দেয়ার সময় এবং ‘পাথর-চাপা-পড়া সাময়িক নিরানন্দ বন্ধ্যা সময় পার করে’, ‘বর্ণে গন্ধে চিত্রে ছন্দে গদ্যে পাগলের মতো মাথার ভেতর প্রবল স্বপ্নের ঝড়ঝাপটা নিয়ে জেগে উঠেছে কবিতারই বসন্তের হাতের দয়ায়’, ঠিক তখন তিনি চলে গেলেন। একটা সময় খুব কাছাকাছি থাকলেও নাগরিক জীবনের দোলাচলে তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে যাই। সেও তো কম সময় হলো না। এর মধ্যে যে এক-আধবার দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি তা নয়। কিন্তু কখন যে তিনি নাগরিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে একটু একটু করে ক্ষয়ে গেছেন, মোটেও জানতে পারিনি। যখন জানলাম, তখন ‘মৃত্যুর অজস্র বৌলে ভরে গেছে গাছ’। আমরা এমন এক কঠিন ও জটিল সময়ে বসবাস করছি, যখন মন খারাপ করার মতো অজস্র ঘটনা ঘটে যায় অহরহ। সান্ত্বনা ও ভালোবাসাও এখন অনাÍীয় হয়ে গেছে। নিজেকেই নিজের সান্ত্বনা দিতে হয়। নিজেকেই নিজের ভালোবাসতে হয়। আবিদ আজাদের কবিতা আমাদের সান্ত্বনা দিয়েছে। দিয়েছে ভালোবাসা। মাথায় বুলিয়ে দিয়েছে স্মেহের হাত। হঠাৎ করে তিনি চলে যাওয়ার পর আমরা যেন এক শূন্যতায় পড়ে যাই। আর এই শূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে হলে তাঁর কবিতায় নিজেকে সমর্পণ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। তাঁর সৃষ্টিই আমাদের তাকে মনে করিয়ে দেবে।
রচনা কাল : মার্চ ২০০৫
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন