পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

রবিবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৬

শাড়ি



এক্সকিউজ মী। কিছু মনে করবেন না। আপনাকে একটু বিরক্ত করতে চাই।
কোনো রকমে কথাটা বলতে পারলো সাহান। এটুকু ব’লে ও আনইজি ফিল করতে থাকে। অগ্রহায়ণের বিকেলটা সবে খুলছে। একটা ফুরফুরে আমেজ। শীতের সূক্ষন কামড় প্রকৃতিতে। তা সত্ত্বেও বিন্দু বিন্দু ঘাম জমতে থাকে তার কপালে। চেষ্টা করেও হাসিটাকে ধরে রাখতে পারছে না ঠোঁটে। পারতপক্ষে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে মোটেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না সাহান। আর অচেনা মেয়ে হলে তো কথা নেই। অথচ একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে এসে তাকে নিজের খোলস থেকে বের হতে হলো।
টুকটাক কিছু কেনা-কাটা করতে হবে ব’লে রূপককে নিয়ে সাহান এসেছে নিউমার্কেটে। কেনাকাটা সেরে বের হয়ে আসছিল ওরা। এমন সময় দক্ষিণের গেট দিয়ে একটি মেয়েকে ঢুকতে দেখা যায়। মেয়েটিকে প্রথম দেখায় যে কেউ হোঁচট খাবে। অবিকল যেন মাধুরী দীক্ষিত। অপাপবিদ্ধ আয়ত দুই চোখ। কেমন যেন স্বপ্ন জড়ানো। নাম না জানা সুগন্ধি ফুলের পাপড়ির মতো ওষ্ঠ। প্রিন্টেট সালোয়ার-কামিজ। মেয়েটাকে দেখে বুকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে ভালো লাগার অনুভূতি। নাকে এসে লাগে দামি কোনো সুগন্ধী।
মেয়েটা খানিকটা এগিয়ে যেতেই রূপক বললো, দোস্ত, দারুণ জিনিস। তুই যদি কথা বলতে পারিস, তোকে নগদ এক হাজার পুরস্কার দেব।
কোনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে ভয় খায় সাহান। আজ অব্দি এমন কিছুই কখনো করে নি, যাতে ঝলসে ওঠে সাহসের স্ফুলিঙ্গ। একটা শাইনেস সর্বদা ঘিরে রাখে তাকে। এই দুর্বলতাটুকু বন্ধু-বান্ধবরা ভালো করেই জানে। এটা জেনেই বন্ধু-বান্ধবরা সুযোগ নেয়। যখন-তখন তাকে ফেলে দেয় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। কিন্তু আজ হঠাৎ সাহান হয়ে যায় অন্য মানুষ। বের হয়ে আসে পরিচিত গন্ডি থেকে। রূপকের দিকে রহস্যময় একটু হাসি দিয়ে দ্রুত মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায়। চারপাশের যাবতীয় ঔৎসুক্য দৃষ্টিকে উপেক্ষা করে সে কাছাকাছি হয় মেয়েটির।
কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে একরাশ সঙ্কোচ নিয়ে মেয়েটির পাশাপাশি হাঁটতে থাকে।
মেয়েটি প্রথম অবস্থায় থমকে গেলেও চোখে-মুখে একরাশ কৌতূহল নিয়ে বললো, জ্বী, বলেন।
কিছুটা ধাতস্থ হয়ে সাহান বললো, আসলে আমি এসেছিলাম, একটা শাড়ি কিনতে। একজনকে গিফট করবো। কিন্তু এ বিষয়ে আমার একদমই আইডিয়া নেই। তাই নিরূপায় হয়ে আপনার একটু হেলপ চাচ্ছিলাম। যদি আপনি বিরক্ত বোধ না করেন।
মেয়েটি সাহানের অ্যাপ্রোচে হেসে ফেলে।
একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে, তারজন্য অ্যাত অনুনয়-বিনয়ের কী আছে? কী শাড়ি কিনতে হবে বলুন?
আমি এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ আনাড়ি। যা ভালো হয়, কিছু একটা কিনে দেন।



আরে বাবা, কার জন্য কিনবেন, কত টাকার মধ্যে কিনবেন, সেটা না বললে হবে কী করে? তাছাড়া যার শাড়ি কিনবেন, তার বয়স কত, গায়ের রঙ কেমন, এসব না জেনে শাড়ি কিনবো কীভাবে?
সাহান একটু ভেবে নিয়ে বললো, এই হাজারখানেক টাকার মধ্যে হলেই হবে। আর সব কিছু আপনার মতো। আপনাকে যেমন শাড়িতে মানায়, তেমন হলেই হবে।
আমার মতো? একগুচ্ছ সংশয় নিয়ে জানতে চাইলো মেয়েটি।
কথায় কথায় সাহানের আড়ষ্টতা অনেকখানি কেটে যায়। কথা চালিয়ে যেতে থাকে সাবলীলভাবে।
হ্যাঁ, যারজন্য শাড়িটি কিনতে চাচ্ছি, সেও আপনার মতো অদ্ভুত সুন্দর। আপনি চয়েজ করে দিলে আমার বিশ্বাস, তার অবশ্যই পছন্দ হবে।
আমার ওপর আপনার দেখছি দারুণ কনফিডেন্স। না জেনে না শুনে অ্যাতটা আস্থা থাকা ভালো নয়। তাতে ক’রে জীবনে অনেক পস্তাতে হয়। আর আমি বুঝি সুন্দর!
শুধু সুন্দর বললে অবশ্যই ভুল বলা হবে। অপূর্ব। মুম্বাইয়ের একজন নায়িকার মতো।
এ কথা শুনে মেয়েটি মৃদু মৃদু হাসতে থাকে। এমন প্রশংসায় সে যে অভ্যস্ত তা বুঝতে পারা যায়।
বাই দা বাই, এতক্ষণ ধরে কথা বলছি, পরিচয়টা হলো না। আমি সাহান। শব্দ বেঁচে খাই।
বুঝলাম না।
একটি পত্রিকায় কাজ করি।
আপনি সাংবাদিক?
লোকে তাই বলে। আপনি?


আমি সোমা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনোমিক্সে অনার্স পড়ছি। হলে থাকি। চলুন, আপনার শাড়ি কেনা যাক।
বেশ কয়েকটি দোকান ঘোরাঘুরি করে উদ্দীষ্ট শাড়িটি পছন্দ হচ্ছিল না সোমার। রঙ পছন্দ হয় তো প্রিন্ট হয় না। সোমা যে বেশ চুজি তা অনুধাবন করতে সময় লাগে না সাহানের। অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে একটা শাড়িতে রফা হলো।
শাড়ি কেনা হতেই সাহান বললো, যাক, ঝামেলা চুকলো। আপনার সৌজন্যে শাড়ি কেনার অভিজ্ঞতাও হলো। এরপর সোমাও কিছু প্রয়োজনীয় কেনা-কাটা সারলো। অনেকক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর সাহান বললো, গলা শুকিয়ে এসেছে। চলুন, একটু গলা ভিজিয়ে নেই।
সোমার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সাহান তাকে নিয়ে বসলো নভেল ড্রিঙ্কস হাউজে। খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে টুকরো টুকরো কথা কিছুক্ষণ।
বিদায় নেওয়ার জন্য নিউমার্কেটের বাইরে এসে রিক্সা ঠিক করে সোমা। রিক্সা ছেড়ে দেওয়ার মুহূর্তে সাহান শাড়িটি তার হাতে দিয়ে বললো, এটি আপনার জন্যই কেনা। একরাশ বিস্ময় নিয়ে সোমা চেয়ে থাকে সাহানের দিকে। এই ফাঁকে রিক্সাটা আস্তে আস্তে চলতে থাকে।     

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন