পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সুরের ঈশ্বরী

 


'বাচপান কি মোহাব্বত কো দিল সে না জুদা কারনা.......' 

আমি ঠিক জানি না, কোন সুদূর থেকে বেজে উঠতো এই গান। গানের অর্থ বুঝতাম না। শিল্পী চিনতাম না। কোনো কিছুই জানতাম না। কিন্তু সুরের মায়াজালে বিভোর হয়ে যেতাম। বুকের মধ্যে কেমন যেন আবেশ ছড়িয়ে দিত। যেন মেঘ হয়ে ভেসে যেতাম। যেদিন এই গানটি প্রথম শুনেছি, সেদিন থেকে বুকের মধ্যে কেন যেন না পাওয়ার একটা বেদনা অনুভূত হয়। এ গানটি কুয়াশার মতো জড়িয়ে আছে স্মৃতির কুহকে। এ গান যেন জন্মান্তরের। কে যেন হৃদয়ের সবটুকু আকুতি দিয়ে মিনতি জানাচ্ছেন। সেটি হয়ে ওঠেছে সর্বজনীন, সর্বকালীন, সর্বসাধারণের । আজও এ গানটি যখন শুনি, তখনও বুকের মাঝে একই রকম অনুভূতি হয়। এ গান যেন চিরদিনের। চিরকালের। চিরজনমের।

তারপর তো জানতে পারি এ গানের শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। এই গানের আগে ও পরে তাঁর রয়েছে কালজয়ী অসংখ্য গান। সেই গানগুলোও একইভাবে আপ্লুত করে। ছুঁয়ে যায় হৃদয়। তবে সত্যিকার অর্থে আমার হৃদয় দুলিয়ে দেয়, 'মন ডোলে মেরা তান ডোলে/মেরা দিল কা গয়া কারার রে/ইয়ে কোন বাজায় বাঁশুরিয়া'। তিনি তো গানের সমুদ্র। সব ছাপিয়ে কী কারণে যেন এ গানটির কথাই এই মুহুর্তে খুব বেশি বেশি মনে পড়ে যাচ্ছে। কোনো কারণ নেই। মানুষের সব কার্যকরণের কোনো হেতু থাকে না। অবশ্য এই গানে এমন একটা সম্মোহন আছে, তাতে সহজেই নেচে ওঠে মনপ্রাণ। আর সুর তো মোহগ্রস্ত করে রাখে। বীণ বাজিয়ে যেভাবে সম্মোহিত করা হয়, তাতে সাপ তো বটেই, মানুষের পক্ষে সুস্থির থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। জাদু, মায়া আর মুগ্ধতায় মাখামাখি হয়ে আচ্ছন্ন করে দেয়। তাঁর কণ্ঠ কখনও দানাদার মিছরির মতো মিষ্টতা ছড়িয়ে দেয়। আবার কখনও ধারালো ছুরির মতো হৃদয়ে বিদ্ধ করে। তবে গান মানেই কেন যেন মনে হয় লতা মঙ্গেশকরের কথা। তাঁর যে কণ্ঠমাধুর্য তা হয়ে ওঠেছে চিরকালীন এক নিদর্শন। 

তাঁর গাওয়া বাংলা গান তো বুকের মধ্যে জ্বালিয়ে দেয় ভালোবাসার ধুপ। একটা সময় তাঁর গান শুনে মন যে কোথায় হারিয়ে যেত, তার হদিস পেতাম না। 'প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে/আমারই এ দুয়ারও প্রান্তে/সে তো হায়, মৃদু পায়/এসেছিল পারি নি তো জানতে'। আসলেই কি এসেছিল? তা বুঝতে না পারাটা অনন্ত এক আক্ষেপ হয়ে আছে। 

সেই শৈশব থেকে লতা মঙ্গেশকরকে হৃদয়পটে স্থান দিয়েছি। ভালোবেসেছি তাঁর গান। নিখাদ সেই ভালোবাসা। তাঁকে কখনও আলাদা করে ভাবি নি। কী করে ভাববো? তিনি আমাদের সুরে সুরে যেভাবে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছেন, তার কোনো তুলনা হয় না।

তিনি তো সুরের ঈশ্বরী। কত কত আগে থেকে তাঁর সুরের জাদু দিয়ে আমাদের সম্মোহিত করে রেখেছেন। এই ভুবনকে যাঁরা সুরময় করতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। মন কেমন করা সেই গানগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। অনেক দুঃখের মুহুর্তে কোনো কোনো গান সান্ত্বনা দিয়েছে। লাঘব করে দিয়েছে কষ্টগুলোকে। আবার আনন্দময় মুহূর্তের সঙ্গী হয়েছে তাঁর গান। কত গান, কত শত গান, কত সহস্র গান। তাঁর সুরের সুরা পান করলে সেই নেশা কখনো ছেড়ে যায় না। এখনও চিরায়ত সেই গানগুলো শুনলে বুকের মধ্যে কেমন কেমন করে। 

হায়! থেমে গেছে সেই কিন্নরীকণ্ঠ। যেন মৃত্যু হয়েছে সুরের আত্মার। যেখান থেকে আর কোনো সুর ভেসে আসবে না। তবে যে সুর তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন, তা কখনও থেমে যাবে না।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন