ভরা বর্ষার মতো যেন তাঁর কণ্ঠসুধা। বর্ষায় নদীর পানি যেমনি উপচে উপচে পড়ে, তেমনিভাবে তাঁর গলায় আপ্লুত হয়েছে সুরের উচ্ছ্বাস। বাঁধনহীন হয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশে ভেসে ওঠেছে ইন্দ্রধনু। তাঁর গান কোথাও বাজলে চারপাশটা ঝলমল করে। ভরিয়ে দেয় সুরের ঝর্ণাধারায়। সমস্ত কিছুকে আড়াল করে দেয়। সুরের ঝংকারে সরগরম করে দেয় নিস্তব্ধ দুপুর কিংবা মায়াবী সন্ধ্যা। ধুপের মতো ভেসে ওঠে ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি।
হয়তো কিছুই নাহি পাবো
তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাব
.........
ধুপ চিরদিন নীরবে জ্বলে যায়
প্রতিদান সে কি পায়
এভাবে আকুল হয়ে গাইতে থাকলে না পাওয়া সেই ভালোবাসা কি আনমনা করে দেয় না? স্মৃতিপটে মর্মরিত হয় ফেলে আসা দিনগুলো। আনন্দময় ক্ষণগুলোও বেদনা হয়ে আর বেদনার মুহূর্তগুলো আনন্দ হয়ে সৌরভ ছড়িয়ে দেয়।
কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে
আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে
এই গান যখন শুনতে পাই, বুকের মধ্যে কেমন কেমন করতে থাকে। প্রিয় মানুষ ছাড়া এমনভাবে কে আর মিনতি করবে? হায়! হাল আমলে এমনভাবে কেউ আর নিবেদন করে না। সবটাই যেন স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। আর সেই স্মৃতি জাগিয়ে দেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
যেন কোনো সুদূরকাল থেকে বেজে চলেছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলো। চিরায়ত সব গান। এখন হয়তো তাঁর গান সেভাবে শোনা হয় না। কিন্তু কাছে বা দূরে কোথাও যখন বেজে ওঠে, কেড়ে নেয় যাবতীয় মনোযোগ। তখন হৃদয় দিয়ে শুনতেই হয়। তা যে মরমে গিয়ে পৌঁছায়। সুচিত্রা সেনের মায়াবী সৌন্দর্য আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠমাধুর্যের সম্মিলনে যেন রূপকথার জগতে নিয়ে যেত। সমবয়সী এই দুই শিল্পীর যোগসূত্রে বাংলা চলচ্চিত্র সন্ধান পেয়েছিল স্বর্ণযুগের। কালের নিয়মে এই জুটিটা অনেক আগেই টুটে গেছে, তারপরও তারা ছিলেন। সুচিত্রা সেন চলে গেছেন কয়েক বছর আগে। তখন আবেগময় কণ্ঠে সন্ধ্যা বলেছিলেন 'শরীর চলে গেল, কণ্ঠ পড়ে রইল'। এ থেকে দুজনের সম্পর্কের বুননটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এবার সন্ধ্যা পেরিয়ে পাড়ি দিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কণ্ঠও আর রইলো না। রইলো কেবল নস্টালজিয়া।
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন