পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেন


ভরা বর্ষার মতো যেন তাঁর কণ্ঠসুধা। বর্ষায় নদীর পানি যেমনি উপচে উপচে পড়ে, তেমনিভাবে তাঁর গলায় আপ্লুত হয়েছে সুরের উচ্ছ্বাস। বাঁধনহীন হয়ে ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আকাশে ভেসে ওঠেছে ইন্দ্রধনু। তাঁর গান কোথাও বাজলে চারপাশটা ঝলমল করে। ভরিয়ে দেয় সুরের ঝর্ণাধারায়। সমস্ত কিছুকে আড়াল করে দেয়। সুরের ঝংকারে সরগরম করে দেয় নিস্তব্ধ দুপুর কিংবা মায়াবী সন্ধ্যা। ধুপের মতো ভেসে ওঠে ছেঁড়া ছেঁড়া স্মৃতি।


হয়তো কিছুই নাহি পাবো

তবুও তোমায় আমি দূর হতে ভালোবেসে যাব

.........

ধুপ চিরদিন নীরবে জ্বলে যায়

প্রতিদান সে কি পায়

এভাবে আকুল হয়ে গাইতে থাকলে না পাওয়া সেই ভালোবাসা কি আনমনা করে দেয় না? স্মৃতিপটে মর্মরিত হয় ফেলে আসা দিনগুলো। আনন্দময় ক্ষণগুলোও বেদনা হয়ে আর বেদনার মুহূর্তগুলো আনন্দ হয়ে সৌরভ ছড়িয়ে দেয়। 


কিছুক্ষণ আরও না হয় রহিতে কাছে

আরও কিছু কথা না হয় বলিতে মোরে


এই গান যখন শুনতে পাই, বুকের মধ্যে কেমন কেমন করতে থাকে। প্রিয় মানুষ ছাড়া এমনভাবে কে আর মিনতি করবে? হায়! হাল আমলে এমনভাবে কেউ আর নিবেদন করে না। সবটাই যেন স্মৃতির অংশ হয়ে গেছে। আর সেই স্মৃতি জাগিয়ে দেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।

যেন কোনো সুদূরকাল থেকে বেজে চলেছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া গানগুলো। চিরায়ত সব গান। এখন হয়তো তাঁর গান সেভাবে শোনা হয় না। কিন্তু কাছে বা দূরে কোথাও যখন বেজে ওঠে, কেড়ে নেয় যাবতীয় মনোযোগ। তখন হৃদয় দিয়ে শুনতেই হয়। তা যে মরমে গিয়ে পৌঁছায়। সুচিত্রা সেনের মায়াবী সৌন্দর্য আর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠমাধুর্যের সম্মিলনে যেন রূপকথার জগতে নিয়ে যেত। সমবয়সী এই দুই শিল্পীর যোগসূত্রে বাংলা চলচ্চিত্র সন্ধান পেয়েছিল স্বর্ণযুগের। কালের নিয়মে এই জুটিটা অনেক আগেই টুটে গেছে, তারপরও তারা ছিলেন। সুচিত্রা সেন চলে গেছেন কয়েক বছর আগে। তখন আবেগময় কণ্ঠে সন্ধ্যা বলেছিলেন 'শরীর চলে গেল, কণ্ঠ পড়ে রইল'। এ থেকে দুজনের সম্পর্কের বুননটা সহজেই অনুধাবন করা যায়। এবার সন্ধ্যা পেরিয়ে পাড়ি দিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। কণ্ঠও আর রইলো না। রইলো কেবল নস্টালজিয়া।

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২

মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আত্মসম্মান

  


এই দুর্দিনে বিকাশ অ্যাকাউন্টে এতগুলো টাকা কে পাঠালো? কারও টাকা কি ভুল করে চলে এলো? সেটার সম্ভাবনাই বেশি। তাকে টাকা পাঠাতে পারে, এমন কারও কথা তার অন্তত জানা নেই। আর পাঠালে তো তাকে আগেই জানিয়ে দিত। তাকে তো কেউ কিছু জানায়নি। বরং স্বভাব বিরুদ্ধভাবে আকার-ইঙ্গিতে খুবই ঘনিষ্ট কয়েকজনের কাছে নিজের সমস্যা ও সংকটের কথা বলেছিল। নিরূপায় হয়ে আপৎকালীন কিছু টাকা ধার চেয়েছিল। কোনো রকম সহযোগিতা তো পাওয়াই যায়নি, উল্টো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এমন অবস্থায় এতগুলো টাকা কোথা থেকে এলো? এর কোনো হদিস মিলছে না। আর ভুল করে যদি টাকা চলেও আসে, তাহলে তো অবশ্যই তাকে ফোন করার কথা। এখনও কেউ ফোন করেনি। অবশ্য সে জন্য কিছু সময় লাগতে পারে। যাকে টাকা পাঠানোর কথা, সে যখন না পাওয়ার বিষয়টি জানাবে, তখন হয়তো প্রাপকের হুঁশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আরও অপেক্ষা করা যেতে পারে। এমনটাই ভেবে নেয় মুহিবুর।

জীবনে কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি সে। মোটামুটিভাবে খেয়ে পড়ে দিনগুলো চলে যাচ্ছিল। উপচে পড়ার মতো কিছু ছিল না। আবার খুব বেশি সংকটও ছিল না। মাঝেমধ্যে অনটনে পড়তে হয়েছে। তা যেভাবে হোক সামলানো গেছে। মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমনটা হয় আর কি। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণ হওয়ার পর জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। প্রথম দিকে বৃত্তের পরিধি একটু একটু করে সংকুচিত হতে থাকলেও ভেবেছে, একটা সময় এই সমস্যা কেটে যাবে। ভাবনার সঙ্গে বাস্তবতা মিলছে না। সমস্যা নিরসন তো হচ্ছেই না, দিনে দিনে তা বেড়েই চলেছে। 

মুহিবুর যে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল, সেখানকার পরিস্থিতি খারাপ না হলেও খামখেয়ালিভাবে হাতেগোনা যে কয়েকজনকে ছাঁটাই করা হয়, সে তাদের একজন। করোনার মধ্যেও কাজ করতে করতে সে অসুস্থ হয়ে যায়। আর অসুস্থ হলে এখন সবার মধ্যে একটা ভাবনাই কাজ করে। যদিও তার কিছু সিম্পটন করোনার মতো মনে হয়। যে জন্য তার করোনা পরীক্ষা করার আগেই সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। অফিস থেকে তাকে ছুটিতে থাকতে বলা হয়। পরীক্ষায় তার রেজাল্ট নেগেটিভ আসে। সুস্থ হয়ে অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে বলা হয় যোগদানের কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। তিন দিন পর মৌখিকভাবে জানানো হয়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে তার আর এই প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন নেই। 

এমন কিছুর জন্য মুহিবুর একদমই প্রস্তুত ছিল না। তবে কেন তার প্রয়োজন নেই, সে অনুমান করতে পারে। চাকরির ধারাবাহিকতা ও বয়সের দিক দিয়ে সে ছিল সবার সিনিয়র। এটা ছিল বড় একটা ফ্যাক্টর। তাছাড়া সে কারও সাতপাঁচে থাকতো না। অফিসের কোথায় কী হচ্ছে, তার খোঁজখবরও খুব একটা রাখতো না। সহকর্মীরা তাকে নিরীহ ও সজ্জন ভদ্রলোক হিসেবে সম্মান করতো। নিজের কাজটা মন দিয়ে করার ব্যাপারে সে কখনও কার্পণ্য করতো না। বুঝতে পারে, আন্তরিকতা ও নিষ্ঠা সহকারে কাজ করলেও অভ্যন্তরীণ দলাদলির কারণে তার ওপর খড়গটা নেমে এসেছে। কারও পক্ষের না হলে, কারও তোষামোদ না করলে কিংবা ক্ষমতার দাপট দেখাতে না পারলে কোথাও টিকে থাকা কঠিন। এই অপারগতাই হয়ে উঠে অযোগ্যতার মাপকাঠি। 

দীর্ঘ দিন একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিল, সেখান থেকে অব্যাহতি দিলেও তাকে একটি টাকাও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে দেনদরবার করাটা তার কাছে রুচিবহির্ভূত মনে হয়েছে। মনে করেছে, এত বড় একটি প্রতিষ্ঠান, তাকে যদি ঠকিয়ে ভালো থাকতে পারে, থাকুক। অবশ্য শুভাকাক্সক্ষী কেউ কেউ তাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছিল। মামলার মতো একটি জটিল প্রক্রিয়ায় সে জড়াতে চায়নি। সে বরাবরই নির্ভেজাল থাকতে চেয়েছে। কিন্তু চাইলে কি আর নির্ভেজাল থাকা যায়? 

চাকরিটা হারিয়ে অথৈ সাগরে পড়ে যায় মুহিবুর। সময়টা এখন এমন, নতুন চাকরি পাওয়া আর হাতে চাঁদ পাওয়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। একটা সময় কর্মক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার মূল্য দেওয়া হতো। আর এখন অভিজ্ঞ হলে সে হয়ে যায় অচল মুদ্রার মতো। প্রতিদিনই কেউ না কেউ চাকরি হারাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই সান্ত¡না দেয়। আশ্বস্ত করে। কিন্তু কোথাও আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। জমানো কিছু টাকা ছিল, তাই ভেঙে ভেঙে কোনো রকমে চলছিল। সেটাও ফুরিয়ে গেছে। সন্তানদের স্কুল-কলেজ বন্ধ। পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়লেও কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না। সে দিক দিয়ে খানিকটা বাঁচোয়া। 

এই ঢাকা শহরে একটা পরিবার নিয়ে কত দিন এভাবে চলা যায়? সংসারে স্ত্রী, দুই সন্তান, বাবা-মা। আর সবকিছু বাদ দিলেও খাওয়া-দাওয়া, বাড়ি ভাড়ার ব্যয় কীভাবে মিটানো যাবে? অনেকেই টিকতে না পেরে গ্রামে চলে গেছে। তার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। নিজের অসহায়ত্বের কথা সবাইকে তো মুখ ফুটে বলাও যায় না। অবশ্য বললেও কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না। খুব কাছের মানুষদের কাছে জীবনে প্রথম কিছু টাকা লোন চেয়েছিল। কেউই সাড়া দেয়নি। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন অন্য কারও কাছে হাত পাতলে কী আর হবে? সে ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য ভিক্ষা করা ছাড়া তো বিকল্প পথ নেই। সেটাইবা কীভাবে সম্ভব?

জীবনে সে বড় কিছু চায়নি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মসম্মানের সঙ্গে বেঁচে থাকাটাই তার কাছে হয়ে উঠে সম্মানজনক। এই আত্মসম্মানের জন্য কারও কাছে কখনো আপস করেনি। এই একটা কারণে অনেকের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাতে তার কিছু এসে যায়নি। সে তার মতো করে চলেছে। তার চোখের সামনে পরিচিত কত জন রাতারাতি অর্থ-কড়ি, গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। কীভাবে হয়েছে, সেটাও দেখেছে। সেই পথ অনুসরণ করলে হয়তো সেও বিত্তশালী হওয়ার রাস্তায় হাঁটতে পারতো। আর কিছু না হোক, অন্তত স্বাচ্ছন্দ্যে তো থাকা যেত। তেমনটা সে হতে চায়নি। এখন বুুঝতে পারে, জীবনে অনেক ভুল করেছে। এখন তো আর এই ভুল পরিমার্জন করার সুযোগ নেই। সময় গড়িয়ে গেছে। বয়স বেড়েছে। এখন মনে হচ্ছে, জীবনে কোনো সিদ্ধান্তই সে ঠিকঠাক মতো নিতে পারেনি। 

দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন কিংবা সমাজে বিশিষ্ট, এমন অনেকের সঙ্গে পেশাগত জীবনে মুহিবুরের পরিচয় হয়েছে। ঘনিষ্টতা হয়েছে। তাদের কারও কারও পছন্দের তালিকায় সে ছিল। এ কারণে অনেকেই তাকে পাওয়ারফুল মনে করে। কিন্তু কখনোই সেই সম্পর্ক ভাঙিয়ে কোনো সুবিধা নেওয়ার কথা ঘুণাক্ষরেও ভাবেনি। কাছের কিংবা দূরের অনেকেই কাজ হাসিলের জন্য চাপাচাপি করেছে। তারপরও নিজেকে বরাবরই সংযত রেখেছে। আসলে তার মন-মানসিকতার সঙ্গে খাপ না খেলে সে কোনো কিছু করতে আগ্রহী নয়। সেটা সে পারেও না। 

তার মানে এই নয় যে এই জীবনে যা যা করেছে, সবটাতে মনের মিল ছিল। তা তো আর সম্ভব নয়। মন সায় না দিলেও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে ছোটোখাটো অনাকাক্সিক্ষত কিছু কাজ তো করতে হয়েছে। সে কারণে অসহায়তা আছে। আত্মগ্লানি আছে। মর্মযাতনা আছে। তারপরও বুকের মধ্যে কিছুটা অহংকার রয়ে যায়। সেটাই তার বেঁচে থাকার পাথেয়। এই করোনাকালে সেটুকু বোধকরি এখন বিসর্জন দেওয়ার সময় এসেছে। 

ভালোবাসার সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় তার আত্মঅহমিকা। 

তাবাসসুমের সঙ্গে বিয়েটা হলো না নিছক তার গোঁয়ার্তুমির কারণে। সচ্ছল পরিবারের মেয়ে। দেখতে সুন্দর। পড়ালেখায়ও তুখোড়। তার জন্য অনেক ছেলেই দিওয়ানা ছিল। অথচ তার মতো একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেকে কী কারণে যেন তাবাসসুমের ভালো লেগে যায়। সেও তার সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু চলাফেরা করতে গিয়ে নিজের অর্থনৈতিক দুর্বলতা একটু একটু করে তার কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তখন থেকেই মনের মধ্যে একটা টানাপোড়েন চলতে থাকে। চাকরিটাও আশানুরূপ হয়নি। এই চাকরি দিয়ে তাবাসসুমের পারিবারিক স্ট্যাটাসের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা তার পক্ষে মোটেও সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে সে একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায়। সে জানতে পারে, তাবাসসুমের পরিবারও এই সম্পর্কটা মেনে নিতে সম্মত নয়। তারা তাবাসসুমের ওপর বেশ চাপও সৃষ্টি করে।

মেয়েটা তাকে অসম্ভব ভালোবাসতো। সে পারিবারিক সমর্থন ছাড়াই বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করে। তার মন তাতে সায় দেয়নি। এই বিষয় নিয়ে তাবাসসুমের সঙ্গে খোলাখুলি আলাপ হয়। তার মনোভাব ছিল এমন, বিয়ে হয়ে গেলে তার পরিবার মেনে নিতে বাধ্য হবে। মুহিবুর বলেছিল, মেনে নিলেও ব্যবধান তো ঘুচবে না। তাবাসসুম তাকে আশ্বস্ত করেছিল, এ নিয়ে তোমার ভাবনার কিছু নেই। তোমাকে তো শশুরের ওপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে না। তুমি চাকরি করছো। আমিও সহসাই ভালো কোনো চাকরি পেয়ে যাব। তখন আর তোমার মানসিক যন্ত্রণা থাকবে না। 

তাবাসসুমের চাকরিটাই তার মানসিক অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বড় একটা প্রতিষ্ঠানে যোগ দেয় সে। দু’জনের বেতনের মধ্যে দুস্তর ব্যবধান। পর্যায়ক্রমে তা বাড়তেই থাকবে। আর সে ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে পড়বে৷ তখনই সে সিদ্ধান্ত নেয়, সে কখনোই তাবাসসুমের যোগ্য হয়ে উঠতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সম্পর্কটার ইতি টেনে দেওয়াই উভয়ের জন্যই মঙ্গল হতে পারে। এই সিদ্ধান্তটা কার্যকর করার ক্ষেত্রে সে কোনো দ্বিধা করেনি। চট করে তার সামনে একটা সুযোগও এসে যায়। চাকরিতে যোগদানের পর পরই ট্রেনিংয়ের জন্য তাবাসসুমকে বিদেশে পাঠানো হলে সে এই ফাঁকে সংসার জীবন বেছে নেয়। তাবাসসুমের সঙ্গে আর কখনও যোগাযোগ রাখেনি।

পুরানো দিনের স্মৃতি এখন মুহিবুরের সার্বক্ষণিক সঙ্গী। কিন্তু ঘরে বসে নিরিবিলি স্মৃতিচারণ করবে, সেই সুযোগও নেই। অভাবের সংসারে চিল্লাপাল্লা লেগেই থাকে। এমনিতেই করোনাকালে বাসার বাইরে যাওয়ার নানান বিধিনিষেধ রয়েছে। তাছাড়া তার তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এক রকম বন্দি জীবন। সব মিলিয়ে বেদিশা অবস্থা। কিছুক্ষণ আগেও বাসা থেকে তাগাদা দিয়ে বলা হয়েছে, ঘরে চাল-ডাল একদমই নেই। তার পকেটে টাকাও নেই। অথচ তার বিকাশ অ্যাকাউন্টে অনেকগুলো টাকা পড়ে আছে। তার টানাটানির সংসারে এই টাকা দিয়ে সহজেই একটা মাস চালিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু টাকাটা কার, সেটা তো সে জানে না। না জেনে সেই টাকা কীভাবে খরচ করবে? খরচ করার পর টাকা ফেরৎ চাইলে সে তো দিতে পারবে না। 

এখন সে কী করবে? কথায় আছে, অভাবে স্বভাব নষ্ট। স্বভাব কি নষ্ট করে ফেলবে? আপাতত সে কি এই টাকা দিয়ে সংসার চালিয়ে নেবে? পরেরটা না হয় পরে বিবেচনা করা যাবে। এছাড়া তো গত্যন্তর নেই। ক্ষুধা পেটে তো বুদ্ধি-বিবেচনা কাজ করে না। মাথার মধ্যে উল্টাপাল্টা চিন্তাভাবনা ঘুরপাক খেতে থাকে। আচ্ছা, কেউ কি তাকে পরীক্ষা করছে? অদৃশ্য থেকে হয়তো ভাবছে, তোমার না এত আত্মসম্মান? এখন কী করবে? আত্মসম্মান ধুয়ে ধুয়ে পানি খাবে? দেখি, এখন তুমি কী করো?

অনেক ভাবনা-চিন্তা করার পর যে নাম্বার থেকে টাকাটা এসেছে, সেখানে রিংব্যাক করে মুহিবুর। ফোন ধরার পর সে বলে, এই নাম্বার থেকে আমার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়েছে, কে পাঠিয়েছে বলতে পারবেন? জবাবে জানানো হয়, আমাদের প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা লেনদেন হয়, কে কাকে টাকা পাঠায়, সেটা আমাদের পক্ষে বলা সম্ভব নয়। এই কথা বলে ফোন কেটে দেয়। 

পরের মাসেও অন্য একটা নাম্বার থেকে একই পরিমাণ টাকা মুহিবুরের অ্যাকাউন্টে জমা হয়। সঙ্গে সঙ্গে সে রিংব্যাক করে। জবাবে বলা হয়, কে পাঠিয়েছে, বলতে পারবে না। মুহিবুর বললো, এই মাত্র টাকা পাঠানো হয়েছে। আর আপনি বলতে পারছেন না? জবাবে বললো, আপনি টাকাটা এখন পেয়েছেন। আমাদের কাছে হয়তো আগেই টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সিরিয়াল অনুসারে আপনাকে পাঠাতে কিছু সময় তো লেগেছে। সেটা কি মনে রাখা সম্ভব? তাছাড়া অনেকেই নিজেদের পরিচয় আড়াল করে টাকা পাঠান। আমরা তার পরিচয় জানাতে পারি না। 

এ তো অদ্ভুত এক গোলকধাঁধা। প্রতি মাসে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা পাঠানো হচ্ছে। মুহিবুর জানতেও পারছে না। টাকা না থাকায় সংসার চালাতে পারছে না, এখন টাকা পেয়েও মোটেও স্বস্তি পাচ্ছে না। একটা অস্বস্তি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়িত করতে থাকে। এই দুঃসময়ে কে এভাবে নিঃশব্দে ত্রাতা হয়ে তার পাশে দাঁড়ালো? কোনোভাবেই সে হিসাব মিলাতে পারছে না।

হঠাৎ একদিন মুহিবুরের ফোনে একটা মেসেজ আসে, আমাকে তুমি ভুলে গেলেও আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি। তোমার সব খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করি। তোমাকে আমার চেয়ে ভালো আর কে চেনে? তোমার অন্তরটাকে তো আমি পড়তে পারি। তুমি এখন যে কারণে অস্থির হচ্ছো, তা লাঘব করার জন্য এই মেসেজ পাঠাতে হলো। না হলে তো ঠিকমতো ঘুমাতে পারছো না। তুমি আমাকে ফাঁকি দিয়ে সটকে পড়েছো, সেই কষ্ট আমার চিরকাল রয়ে যাবে। তবে আমি তো তোমার দূরের কেউ নই। যার সঙ্গে হৃদয়ের লেনদেন হয়েছে, তাকে আমি অন্তরে লালন করে আসছি। আমি শারীরিকভাবে তোমার কাছ থেকে দূরে সরে গেছি। তবে মানসিকভাবে তোমার কাছেই আছি। এখন তো আমাকে তোমার স্রেফ বন্ধু ভাবতে নিশ্চয়ই সমস্যা নেই। বন্ধুই তো বন্ধুর বিপদে হাত বাড়িয়ে দেয়। তাই না? আশা করি, এতে তোমার আত্মসম্মান ক্ষুণœ হবে না। এটুকু জেনে রাখ, এই আত্মমর্যাদা আছে বলেই তোমাকে ভালোবেসেছি। সেটা কেউ খর্ব করুক, তা আমি কখনও চাইতে পারি না। তবে একটাই অনুরোধ, আমাকে তুমি কখনও দূরের ভেবো না। অন্তত বন্ধু হয়েই থাকতে দাও।

তাবাসসুমের মেসেজ পেয়ে মুহিবুরের বুকের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে রাশি রাশি মেঘ। এই মেঘ থেকে কি বৃষ্টি ঝরবে নাকি আড়ালে থাকা রোদ ঝলমল করে উঠবে, সে ঠিক বুঝতে পারে না।

শুক্রবার, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

আর দেখা হবে না


তাঁর সঙ্গে আগের মতো আর নিয়মিত যোগাযোগ হতো না বললেই চলে। নাগরিক ব্যস্ততা, যানজটের কোলাহল, শারীরিক অসুস্থতা, করোনাকাল মিলিয়ে না চাইলেও একটা দূরত্ব গড়ে ওঠে। সর্বোপরি এক অপরের সঙ্গে ব্যবধান বাড়িয়ে দেয় ফেসবুক। সামাজিক এই যোগাযোগ মাধ্যমটা বড্ড অদ্ভুত কিসিমের। পার্থিব আর অপার্থিবের মধ্যে পার্থক্যটা ঘুচিয়ে দিতে চায়। সম্পর্কের মধ্যে কেমন একটা ক্যামোফ্লাজ তৈরি করে দেয়। সামাজিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে শারীরিক উপস্থিতি না থাকলেও মনে হয় পরস্পরের কাছাকাছিই আছি। হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যাবে। তিনি ফেসবুকে বেশ সক্রিয় থাকতেন। প্রতিনিয়তই তাঁর স্পন্দন অনুভব করতে পারতাম। যে কারণে মনে হতো, তিনি খুব নিকটেই আছেন। প্রকৃতঅর্থে নিকটে না থাকলেও তাঁর সঙ্গে বরাবরই নৈকট্য ছিল। 

‘ক্রীড়াজগত’ পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে যোগ দেওয়ার সময় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব ছিলেন এ এস এম আলী কবীর। বিধিবদ্ধ চাকরির প্রতি আমার এক ধরনের অনীহা ছিল। যাহোক, চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর সেই অনীহাটুকু কাটিয়ে উঠতে মোটেও অসুবিধা হয় নি। এর কারণ, খুব সহজেই তিনি আমাকে আপন করে নেন। তিনি হয়ে উঠেন পরম নির্ভরতা। কোনও সমস্যাই কাছে ঘেঁষতে দেন নি। ছাতা হয়ে ছিলেন মাথার ওপর। প্রাতিষ্ঠানিকতার সঙ্গে সৃজনশীল কাজের যে বিরোধ, তা তিনি কখনই বুঝতে দেন নি। যখনই যা করতে চেয়েছি, তিনি বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। প্রচলিত ধারার বসদের মতো তিনি ছিলেন না। যে কোনও কাজ যাতে সাবলীলভাবে সম্পন্ন হয়, বুদ্ধি বা পরামর্শ দিয়ে তিনি সহায়ক ভূমিকা পালন করতেন। সৃজনশীল কাজের প্রতি তাঁর যথেষ্ট অনুরাগ ছিল। ব্যক্তিগতভাবে তিনি নিজেও জড়িয়ে ছিলেন সৃজনশীল কাজে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলেন। কাব্যচর্চা করতেন। বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করতেন। রচনা করেছেন একাধিক গ্রন্থ। এই ঘরানার মানুষদের সঙ্গে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। 

দীর্ঘ চাকরি জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। অনেকের সঙ্গে মিশেছেন। তবে ক্রীড়াঙ্গনের প্রতি তাঁর আলাদা একটা মমত্ববোধ গড়ে ওঠে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দুই দফায় সচিব থাকাকালে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ফেলেন। এই জগতের মানুষগুলোর সঙ্গে তাঁর ছিল আত্মিক এক বন্ধন। গুরুত্বপূর্ণ অনেক দায়িত্বে থাকলেও ক্রীড়াঙ্গন থেকে কখনও দূরে সরে থাকেন নি। মোটামুটিভাবে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায় নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সভাপতি হওয়ার পর ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যোগাযোগের পরিধি বৃদ্ধি পায়।   সামাজিক, পেশাগত পরিমণ্ডলে তো বটেই, ক্রীড়াঙ্গনে তাঁর ছিল অসম্ভব জনপ্রিয়তা। তিনি নিজেও ছিলেন মজলিশী স্বভাবের মানুষ। পছন্দ করতেন খানাপিনা, আড্ডা। সর্বদা প্রাণোচ্ছ্বল বাতাবরণে থাকতে ভালোবাসতেন। জোছনা, পাহাড়, নদী তাঁকে অসম্ভব টানতো। 

তাঁর স্নেহ, ভালোবাসা থেকে কখনই বঞ্চিত হই নি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে উচ্চ পদে কর্মরত থাকলেও বরাবরই যোগাযোগটা ছিল। আমার খোঁজ-খবর নিতেন। তাঁর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগটা অনিয়মিত হলেও একটা বিশ্বাস অটুট ছিল, একজন অভিভাবক হয়ে তিনি আছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান। টেলিফোনে যখন শেষবার কথা হয়, তখন তিনি জানিয়েছিলেন, এই জানুয়ারিতে বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের কার্যালয় এনএসসি টাওয়ারে স্থানান্তর করা হচ্ছে। টাওয়ারে অফিস নেওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল, ক্রীড়াঙ্গনের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থান করা। যাতে ক্রীড়াঙ্গনের সবার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা সহজ হয়। শুনে খুশি হয়েছিলাম। বলেছিলাম, যাক, এখন থেকে আপনার সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ হবে। নিয়মিত তো দূরে থাক, আর কোনও দিনই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে না।

১১ জানুয়ারি ২০২২

সুরের ঈশ্বরী

 


'বাচপান কি মোহাব্বত কো দিল সে না জুদা কারনা.......' 

আমি ঠিক জানি না, কোন সুদূর থেকে বেজে উঠতো এই গান। গানের অর্থ বুঝতাম না। শিল্পী চিনতাম না। কোনো কিছুই জানতাম না। কিন্তু সুরের মায়াজালে বিভোর হয়ে যেতাম। বুকের মধ্যে কেমন যেন আবেশ ছড়িয়ে দিত। যেন মেঘ হয়ে ভেসে যেতাম। যেদিন এই গানটি প্রথম শুনেছি, সেদিন থেকে বুকের মধ্যে কেন যেন না পাওয়ার একটা বেদনা অনুভূত হয়। এ গানটি কুয়াশার মতো জড়িয়ে আছে স্মৃতির কুহকে। এ গান যেন জন্মান্তরের। কে যেন হৃদয়ের সবটুকু আকুতি দিয়ে মিনতি জানাচ্ছেন। সেটি হয়ে ওঠেছে সর্বজনীন, সর্বকালীন, সর্বসাধারণের । আজও এ গানটি যখন শুনি, তখনও বুকের মাঝে একই রকম অনুভূতি হয়। এ গান যেন চিরদিনের। চিরকালের। চিরজনমের।

তারপর তো জানতে পারি এ গানের শিল্পী লতা মঙ্গেশকর। এই গানের আগে ও পরে তাঁর রয়েছে কালজয়ী অসংখ্য গান। সেই গানগুলোও একইভাবে আপ্লুত করে। ছুঁয়ে যায় হৃদয়। তবে সত্যিকার অর্থে আমার হৃদয় দুলিয়ে দেয়, 'মন ডোলে মেরা তান ডোলে/মেরা দিল কা গয়া কারার রে/ইয়ে কোন বাজায় বাঁশুরিয়া'। তিনি তো গানের সমুদ্র। সব ছাপিয়ে কী কারণে যেন এ গানটির কথাই এই মুহুর্তে খুব বেশি বেশি মনে পড়ে যাচ্ছে। কোনো কারণ নেই। মানুষের সব কার্যকরণের কোনো হেতু থাকে না। অবশ্য এই গানে এমন একটা সম্মোহন আছে, তাতে সহজেই নেচে ওঠে মনপ্রাণ। আর সুর তো মোহগ্রস্ত করে রাখে। বীণ বাজিয়ে যেভাবে সম্মোহিত করা হয়, তাতে সাপ তো বটেই, মানুষের পক্ষে সুস্থির থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। জাদু, মায়া আর মুগ্ধতায় মাখামাখি হয়ে আচ্ছন্ন করে দেয়। তাঁর কণ্ঠ কখনও দানাদার মিছরির মতো মিষ্টতা ছড়িয়ে দেয়। আবার কখনও ধারালো ছুরির মতো হৃদয়ে বিদ্ধ করে। তবে গান মানেই কেন যেন মনে হয় লতা মঙ্গেশকরের কথা। তাঁর যে কণ্ঠমাধুর্য তা হয়ে ওঠেছে চিরকালীন এক নিদর্শন। 

তাঁর গাওয়া বাংলা গান তো বুকের মধ্যে জ্বালিয়ে দেয় ভালোবাসার ধুপ। একটা সময় তাঁর গান শুনে মন যে কোথায় হারিয়ে যেত, তার হদিস পেতাম না। 'প্রেম একবারই এসেছিল নীরবে/আমারই এ দুয়ারও প্রান্তে/সে তো হায়, মৃদু পায়/এসেছিল পারি নি তো জানতে'। আসলেই কি এসেছিল? তা বুঝতে না পারাটা অনন্ত এক আক্ষেপ হয়ে আছে। 

সেই শৈশব থেকে লতা মঙ্গেশকরকে হৃদয়পটে স্থান দিয়েছি। ভালোবেসেছি তাঁর গান। নিখাদ সেই ভালোবাসা। তাঁকে কখনও আলাদা করে ভাবি নি। কী করে ভাববো? তিনি আমাদের সুরে সুরে যেভাবে কানায় কানায় ভরিয়ে দিয়েছেন, তার কোনো তুলনা হয় না।

তিনি তো সুরের ঈশ্বরী। কত কত আগে থেকে তাঁর সুরের জাদু দিয়ে আমাদের সম্মোহিত করে রেখেছেন। এই ভুবনকে যাঁরা সুরময় করতে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। মন কেমন করা সেই গানগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে। অনেক দুঃখের মুহুর্তে কোনো কোনো গান সান্ত্বনা দিয়েছে। লাঘব করে দিয়েছে কষ্টগুলোকে। আবার আনন্দময় মুহূর্তের সঙ্গী হয়েছে তাঁর গান। কত গান, কত শত গান, কত সহস্র গান। তাঁর সুরের সুরা পান করলে সেই নেশা কখনো ছেড়ে যায় না। এখনও চিরায়ত সেই গানগুলো শুনলে বুকের মধ্যে কেমন কেমন করে। 

হায়! থেমে গেছে সেই কিন্নরীকণ্ঠ। যেন মৃত্যু হয়েছে সুরের আত্মার। যেখান থেকে আর কোনো সুর ভেসে আসবে না। তবে যে সুর তিনি ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন, তা কখনও থেমে যাবে না।

৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২