পৃষ্ঠাসমূহ

মেঘালয়ের কোলে জোছনা ও জোনাকি

এই শহর আমাকে ক্লান্ত করে তোলে। বিষণ্ন করে তোলে। নানা জট, নানান জটিলতা আর সম্পর্কের টানাপড়েনে বড্ড হাঁপ ধরে যায়। মনের মধ্যে সর্বদাই একটা...

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭

বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান দুই ব্যক্তিত্ব


বাংলা সাহিত্যের কীর্তিমান দুই ব্যক্তিত্ব কবি আহসান হাবীব আর কথাশিল্পী শওকত ওসমানের আজ (২ জানুয়ারি) জন্মশতবার্ষিকী। শারীরিক গড়ন অনেকটা একই রকম হলেও স্বভাবে দু’জন ছিলেন বিপরীত জগতের বাসিন্দা। একজনের ছিল নিভৃত জগত। আরেকজনের ভুবন ছিল কোলাহলময়। সেই শৈশবেই এই দু’জনের সঙ্গে পরিচয় হয়। একজনের সঙ্গে পাঠ্য বইয়ের মাধ্যমে। আরেকজনের সঙ্গে তাঁর জনপ্রিয়তার কারণে। যতদূর মনে পড়ে, স্কুল জীবনে পড়েছিলাম আহসান হাবীবের ছড়া ‘মেঘনা পাড়ের ছেলে’। আর শওকত ওসমানের একাধিক গ্রন্থের নাম যে কারণেই হোক জানা হয়ে যায়। সৌভাগ্যক্রমে দু’জনের সঙ্গেই সাক্ষাৎ হয়েছে।

কলেজে পড়ার সময় একটি সাহিত্য সংকলন প্রকাশের উদ্যোগ নিলে সে সময় ঘনিষ্টতা হয় কবি আবিদ আজাদের সঙ্গে। সেই সুবাদে তাঁর সঙ্গে বিভিন্ন সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে যাওয়ার সুযোগ হয়। দৈনিক বাংলার সাহিত্য সম্পাদক ছিলেন কবি আহসান হাবীব। চারতলায় বসতেন। তাঁর সামনে অনুজ্জ্বল একটি টেবিল। তাতে জমে থাকতো লেখার স্তুপ। চারপাশে কেমন যেন একটা গুমট পরিবেশ। তার মধ্যেই খুব গম্ভীর ও নিবিষ্ট মনে তিনি সম্পাদনার কাজ করতেন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। কথা খুবই কম বলতেন। কবি আবিদ আজাদ তাঁর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। বাংলা ভাষার অন্যতম একজন সেরা কবির সঙ্গে পরিচিত হয়ে সেদিন নিজেকে বেশ গর্বিত মনে হয়েছিল।



আমি তখন দৈনিক বাংলার বাণীতে কর্মরত। সে সময় সম্ভবত ‘রকমারি’ নামে চার পৃষ্ঠার একটি সাপ্তাহিক আয়োজনের সম্পাদনা করতেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান। তাতে নিয়মিত লিখতেন কথাশিল্পী শওকত ওসমান। সে সময় তাঁর একটি ধারাবাহিক রচনা ‘স্মৃতিখণ্ড : মুজিবনগর’ প্রকাশিত হচ্ছিল। সে কারণে তিনি বাংলার বাণীতে আড্ডা দিতে আসতেন। তুখোড় আড্ডাবাজ ছিলেন। তাঁর উপস্থিতিতে প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে ওঠতো নিউজ রুম। সোহরাব ভাই কিছু দিনের জন্য ছুটিতে দেশের বাইরে গেলে তিনি ‘রকমারি’ দেখার দায়িত্ব আমাকে দিয়ে যান। সেই সময় শ্রদ্ধেয় এই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কিছুটা অন্তরঙ্গ হওয়ার সুযোগ হয়। তাঁর লেখার ফাইনাল প্রুফ তিনি নিজেই দেখতেন। দেখা হলেই তাঁর নিজস্ব স্টাইলে সম্বোধন করতেন, ভাই দুলাল কিংবা ভ্রাতৃ দুলাল। আমার অনুপস্থিতিতে দু’দিন আমাকে নিউজপ্রিন্টের কাগজে দুটি চিরকুট লিখে দিয়ে যান। এটি ছিল তাঁর সহজাত বৈশিষ্ট্য। তিনি কত জনকে যে কত কত চিরকুট লিখেছেন। চিরকুটগুলো ছিল খুবই মজার মজার। বেশিরভাগ সময় তাতে থাকতো ছন্দের মিল দিয়ে লিমিরিক জাতীয় কয়েকটি লাইন কিংবা কারো নাম বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী কোনো মন্তব্য। আমাকে লেখা তাঁর চিরকুট দুটি ছিল আমার জন্য অমূল্য সম্পদ। দুঃখজনক হলো, সেই সম্পদ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।
প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিকের পাশাপাশি কথাশিল্পী শওকত ওসমান নানান কারণে আলোচিত ছিলেন। আমি যত দূর জানি, গৃহস্থালির কাজে দেশে প্রথম গ্যাসের লাইন সংযোগ দেওয়া হয় তাঁর শান্তিনগরের বাসায়। ১৯৮৩ সালে তিনি পেয়েছিলেন একুশে পদক। সেই সুবাদে তাঁকে দেওয়া হয় একটি স্বর্ণ পদকও। তিনি পদকটি স্বর্ণের দোকানে নিয়ে গিয়ে জানতে পারেন, তাতে খাদ ভর্তি। এ নিয়ে সে সময় ব্যাপক হৈ চৈ হয়। তিনি নিজেও ছিলেন দারুণ হুল্লোড়বাজ। যে কোনো আসর জমিয়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর কোনো তুলনা ছিল না। এমন ব্যক্তিত্ব এখন আর খুব একটা দেখা যায় না।
কবি আহসান হাবীব ও কথাশিল্পী শওকত ওসমানের জন্মশতবার্ষিকীতে তাঁদের প্রতি জানাই শ্রদ্ধা।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন